ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

দেশের আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরামের মুত্যু, টাঙ্গাইলে দাফন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১০:৪০, ১৭ জুলাই ২০২১
দেশের আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরামের মুত্যু, টাঙ্গাইলে দাফন

পুলিশ বাহিনীর আলোচিত কর্মকর্তা (অব.) আলহাজ্ব আকরাম হোসাইন (এসি আকরাম) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।  ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৬ জুলাই) তার মৃত্যু হয়।  

তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া গ্রামের মরহুম মৌলভী হাবিবুর রহমানের ছেলে।  তার ছোট ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ আলম দুলাল জানান, কয়েক বছর আগে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।  গত ৭ জুলাই তার কিডনিতে সমস্যা হলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন সন্ধ্যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।  সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শুক্রবার বাদ আসর হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  জানাজায় টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে আকরাম হোসাইন বিপিএম (বার) ও পিপিএম (বার) পদক পেয়েছেন।  দেশের চার রাষ্ট্র প্রধান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কারসহ একাধিক পদক গ্রহণ করেছেন।

১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি আকরাম হোসাইনকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।  ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ আকরাম হোসাইনকে শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার হিসেবে জাতীয় পদকে ভূষিত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান।  ১৯৯২ সালের ৪ জানুয়ারি আকরাম হোসাইনকে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) ভূষিত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।  ১৯৯৮ সালের ৮ মার্চ আকরাম হোসাইনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদকে (বিপিএম) ভূষিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৯৭ সালে সরকার কর্তৃক ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষিত চার সন্ত্রাসীর মধ্যে ৩ জন সুইডেন আসলাম, জোসেফ ও বিকাশকে গ্রেপ্তার করেও সুনাম অর্জন করেন।  পরবর্তীতে সরকার ঘোষিত দেশের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে অন্যান্য নজির স্থাপন করেন।  গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছিলেন ইমদু, গালকাটা কামাল, হান্না, লিয়াকত, আগা শামীম, বাস্টার্ড সেলিম, হোয়াইট বাবু, সুব্রত বাইন, কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান, মুরগী মিলন, ভাঙ্গা বাবু, তিব্বত, মোল্লা মাসুদ, পিচ্চি বাবু, লেদার লিটন।  তাদের কাছ থেকে অসংখ্য অস্ত্র উদ্ধার করেন তিনি।

১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই হায়াতুল ইসলাম ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি দল ৫৪ ধারায় আটক করে।  পরে ডিবি হেফাজতে থাকাবস্থায় রুবেলের মৃত্যু হয়। রুবেলের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।  এই মামলায় এসি আকরাম জড়িয়ে যান এবং বিতর্কিত হন।  মামলার রায়ে ২০০২ সালের ১৭ জুন ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত এসি আকরামসহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া মুকুলি বেগম নামের এক আসামিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা। ২০১১ সালের ৫ মে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ে একমাত্র হায়াতুল ইসলাম ঠাকুরের সাজা বহাল রাখা হয়। এসি আকরামসহ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৩ জনকে খালাস দেওয়া হয়। খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, এসআই আমীর আহমেদ তারেক, নুরুল আলম, এএসআই আবদুল করিম, হাবিলদার নুরুজ্জামান, কনস্টেবল রাতুল পারভেজ, মীর ফারুক, মং শে ওয়েন, আবুল কালাম আজাদ, কামরুল হাসান, জাকির হোসেন ও মুকুলি বেগম।  এ রায়ের পর ওই বছরের ৯ মে কারাগার থেকে মুক্তি পান এসি আকরাম।

মুক্তি পাওয়ার পর মিরপুরে নিজ বাসায় প্রতিবেশী, স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে সময় কাটতো এসি আকরামের। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন তিনি, দাড়িও রাখেন।  নিজের চার তলা বাড়ি ‘হোসাইন ভিলার’ দ্বিতীয় তলায় থাকতেন তিনি।

তার নিজ গ্রামে হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়, হুগড়া বেগুনটাল দাখিল মাদ্রাসাসহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীর প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।  এ ছাড়াও শ্যামার ঘাট ব্রিজ, টাঙ্গাইল হুগড়া সড়ক, বিদ্যুৎ সংযোগ, সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপনসহ নানা উন্নয়নের অংশীদার তিনি।

আবু কাওছার/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়