ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৮ ১৪৩১

সেই সাহেরা বানু বললেন ‘অনেক উপকার হলো’

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ১৮ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৭:১৪, ১৮ জুলাই ২০২১
সেই সাহেরা বানু বললেন ‘অনেক উপকার হলো’

করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া মাগুরা শহরের দোয়ার পাড়ের কোরআন প্রশিক্ষক সেই সাহেরা বানুর পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক, কালের কণ্ঠের শুভ সংঘ ও ব্যক্তি পর্যায়ের পাঁচজন। 

রোববার (১৮ জুলাই) সাহেরা বানুর বাড়িতে এক মাসের চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা পৌছে দেন তারা।

জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমের ‘সারা বাংলা’ বিভাগে ১৬ জুলাই সাহেরা বানুর করোনাকালীন খাদ্য সংকটের দুর্দশার বিষয় উল্লেখ করে ‘বিধবা সায়েরা বানু এখন পাগলপ্রায়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পুরো জেলায় সাড়া পড়ে।

আরও পড়ুন- বিধবা সায়েরা বানু এখন পাগলপ্রায়

সাহেরা বানু জানান, তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় বাড়িতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের শুভ সংঘের সদস্যরা এসে খাবার পৌঁছে দেন। ব্যক্তি পর্যায়ে আরও পাঁচজন সহয়তা করেন। আরও কয়েকজন মোবাইলে অর্থ সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবার অনেকেই সহায়তা পাঠানোর পর নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।  

তিনি বলেন, খুবই কষ্টে ছিলাম। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটত। ঘরে খাবার না থাকার কী জ্বালা বলে বোঝাতে পারব না। চারদিকে শুনি নানা রকমের সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। হাত পাততে পারি না। আবার খাবারের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। যারা পাচ্ছেন, বার বার পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত অভাবগ্রস্তরা সহায়তা তেমন পাচ্ছেন না। এমনও দিন গেছে ঘরে খাবার নেই। কতো জনের কাছে গোপনে গিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। সবাই বলেছেন পরে দেবো, কেউ দেয় নাই। ডিসি স্যার, কালের কণ্ঠ শুভ সংঘসহ পাঁচজন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা দিয়েছেন। এতে আমার বেশ কিছু দিন চলে যাবে। যারা আমাকে সহায়তা করলেন, তাদের জন্য আমার অনেক দোয়া রইল।

তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর আগে একমাত্র ছেলে মিঠুন মিয়া স্ত্রী ও দুটি শিশু কন্যা রেখে পানিতে ডুবে মারা যায়। তার শোকে কিছু দিনের মধ্যেই তার স্বামী ওলিয়ার মল্লিকও মারা যান।  নাতনি মিনু ও তনুকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই, কীভাবে ওদের পালবো।

এ সময় নিজের কোরআন শিক্ষার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে কোরআন প্রাশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এতে মোটামুটি চলছিল তার সংসার।  সম্প্রতি করোনার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তার সেই প্রশিক্ষণের কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে।  মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে না পারা আবার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সায়েরা বানু বলেন, এলাকার অধিকাংশ মানুষই গরিব। এ অবস্থায় তাদেরই পেট চলে না।  আমাকে সাহায্য করবে কে? কয়েকজনের পরামর্শে সরকারি হেল্প লাইন নম্বর ৩৩৩ তে ফোন দিয়ে সংযোগ পেতে বার বার ব্যর্থ হয়েছি।  এলাকার পৌর কাউন্সিলরের বাড়িতে বার বার গিয়ে একই অবস্থা।  শেষমেশ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ফোন করে নিজের কষ্টের কথা বললে তিনি পরে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।  কিন্তু ১০ দিন চলে গেলেও কোনো খোঁজই নেননি।  

কালের কণ্ঠের মাগুরা জেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম খান বলেন, সাহেরা বানুর দুর্দশার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে হজলা প্রশাসক, শুভ সংষের বন্ধুরাসহ অনেকেই খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন। অসহায় এই নারীর জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে বলে তিনি জানান।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, সাহেরা বানুর খবর পাওয়া মাত্রই তার জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

শাহীন/মাহি   


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়