তালি দিলে খাবার খায় ‘মেসি’ ও ‘নেইমার’
আবু কাওছার || রাইজিংবিডি.কম
হাতের তালির শব্দে ঘর থেকে বের হয়ে আসে ‘মেসি‘ ও ‘নেইমার’। তালির শব্দে খাবার খায়। আবার তালি দিলে সুবোধের মতো ঘরে চলে যায়। মালিকের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে ঘরে ঢুকে মশারি টেনে তাকে জাগিয়ে তোলে। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলে অভিমান করে খাটের পাশের সোফায় শুয়ে থাকে।
এটা কোনো গল্প না নাটকের দৃশ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সোহানুল ইসলামের ঘরের রোজকার ঘটনা। নিত্যদিনের এই অভ্যাসে তার সঙ্গী ‘মেসি’ ও ‘নেইমার’। নিজের প্রিয় ছাগল দুটোকে এই নামে ডাকেন সোহানুল। সোহানুল ইসলাম খামারি শাহীনুল ইসলামের ছেলে।
মেসি ও নেইমারকে দেখতে রোজ বিভিন্ন এলাকা থেকে শাহীনুলের বাড়ি মানুষের ভিড় লেগেই আছে। এবারের কোরবানির হাটে নিজের প্রিয় ছাগল দুটি বিক্রি করবেন শাহীনুল। হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে সোহানুলের। এ ছাড়া অন্য উপায়ও নেই।
স্থানীয় হাটে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে মেসি ও নেইমারকে ঢাকায় নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন শাহীনুল। তিন বছর ধরে ছাগল দুটিকে বড় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সোহানুল ইসলাম। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যদুরগাতি গ্রামে বাড়ি শাহীনুল ইসলামের। তার ছেলে সোহানুল ইসলাম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
সোহানুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সময় পার করতে গরুর পাশাপাশি দুটি ছাগল লালন-পালন শুরু করি। আদর করে এদের নাম রেখেছি মেসি ও নেইমার। ব্রাজিলের নেইমার ও আর্জেন্টিনার মেসি দুজনেই আমার প্রিয় খেলোয়াড়। তাদের নামে এদের নাম রাখা।
‘‘এদের মধ্যে মেসি বেশি প্রিয়। সেটি মানুষের কাছে থাকতে ও মানুষের সোহাগ পেতে খুব ভালোবাসে। মেসিকে তুলে খাওয়াতে হয়। সেজন্য মানুষ মেসিকে বেশি পছন্দ করে। নেইমার নিজে নিজেই খেয়ে নেয়। সেটি একা থাকতে বেশি পছন্দ করে। মেসি’র ওজন ৯০ কেজি। নেইমারের ৮৫ কেজি।”
পাশের গ্রাম থেকে রাজস্থান হারিয়ানা জাতের এই ছাগল দুটি কিনে আদর সোহাগ করে বড় করেছেন সোহানুল। এদের বয়স ২ বছর ৬ মাস। প্রায় সাড়ে ৩ ফুট লম্বা ও ৩৪ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগল দুটির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। ক্রেতারা এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন।
ছাগল দুটির খাবারের তালিকায় রয়েছে— সকালে কাঁঠাল, কাঁঠালের পাতা, ভূট্টা, ভূষি। বিকেলে আপেল, রাতে ঘাস। কাঠ দিয়ে তৈরি উঁচু চৌকিতে ঘুমায়। দিনে কার্পেটের ওপর থাকে। গরম সহ্য করতে পারে না বলে সব সময় বাতাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোহানুলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, মেসি ও নেইমার ঘরে চৌকির ওপর শুয়ে রয়েছে। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। সোহানুল ইসলাম এসে হাতে তালি দেন। তালির শব্দে আয়েসি ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায় মেসি-নেইমার’ দুটিই। আবার তালি দিলে খাবার থেকে শুরু করে।
সোহানুল ইসলামের মা বলেন, ‘খুব যত্ন নিয়ে নিজের সন্তানের মতো করে ছাগল দুটি লালন-পালন করেছি। ছাগল দুটি ছাড়াও আমাদের খামারে ষাঁড় এবং গাভী রয়েছে।’
নিজের প্রিয় দুই ছাগল প্রসঙ্গে সোহানুল বলেন, ‘শিশুদের মতো লালন-পালন করে এদের বড় করেছি। ছাগল পোষ মানে কিন্তু এতটা পোষ মানে সেটা আমার জানা ছিল না। মেসি ও নেইমারকে আমি পোষ মানিয়েছি। তালির শব্দে শুনে বুঝতে তারা পারে কী বলা হচ্ছে। এই ছাগল দুটির কথা আমার আজীবন মনে থাকবে।’
ওষুধ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন মেসি-নেইমারকে দেখতে এসে বলেন, ‘এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পেরে ছাগল দুটি দেখার আগ্রহ জন্মে। জীবনে প্রথম এত বড় ছাগল দেখলাম। আমার মতো আরও অনেকে আসছে ছাগল দুটি দেখতে।’
অপর দর্শনার্থী আব্দুল গফুর (৬০) বলেন, ‘এত বড় ছাগল এই প্রথম দেখলাম। গ্রামাঞ্চলে এত যত্ম করে ভূট্টা ও আপেল খাইয়ে ছাগল লালন-পালন করা হয়, এটা আমার জানা ছিল না।’
ভূঞাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন দেবনাথ জানান, হারিয়ানা জাতের ছাগল দুটি উপজেলায় সবচেয়ে বড়। এই জাতের ছাগল অল্পসময়ে দ্রুত বর্ধনশীল হয়। খামারিরাও ভালো লাভ করতে পারেন।
টাঙ্গাইল/এমএম/সনি/বকুল