ঢাকা     বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৩ ১৪৩১

ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত জিনিসের জাদুঘর

আবদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:০৩, ২৫ জুলাই ২০২১

প্রাচীন ও বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র সংগ্রহ করাই স্কুলশিক্ষক নাজমুল আবেদীনের শখ। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই দুষ্প্রাপ‌্য জিনিসপত্র সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। প্রায় ৩৪ বছর ধরে তিনি প্রাচীন জিনিসপত্র সংগ্রহ করে আসছেন।

চার শতাধিক বিলুপ্তপ্রায় ও ঐহিত্যবাহী জিনিসপত্র যোগাড় করেছেন তিনি। সেসব নিয়ে গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালা। নাম দিয়েছেন ‘কুমিল্লা জাদুঘর’। কুমিল্লার মগবাড়ি চৌমুহনী এলাকায় তার ভাড়া বাসায় প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটি দর্শনার্থীরা বিনামূল‌্যে দেখতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তা সবার জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষকতা ও প্রাচীন জিনিসপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ, ফটোগ্রাফি এবং লেখালেখিও করেন নাজমুল আবেদীন।

ভাড়া বাড়ির বারান্দা এবং ড্রয়িং রুমসহ তিনটি কক্ষে সংগ্রহকৃত জিনিসগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মানুষের বোঝার সুবিধার্থে বেশিরভাগ জিনিসের নাম কাগজে লিখে রাখা হয়ছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন স্ত্রী ফারহানা মরিয়ম, ছেলে রূপক ও পুলক। স্থানের অভাবে দুষ্প্রাপ্য অনেক জিনিসপত্র প্রদর্শন করতে পারছেন না তিনি। তবে, শিগগিরই হয়তো সে সমস্যা দূর হবে।

তার সংগ্রহশালায় আছে, প্রথম দিককার টেলিভিশন, শত বছরের পুরনো ইট, বিভিন্ন খনিজসম্পদ, পাথর, তাঁতের চরকা, কাঁসা-পিতলের ডেগ, প্রাচীনকালের কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম, ৩২ কেজি ওজনের প্রাচীন ফ্যান, হেজাগ লাইট, বিভিন্ন পশু-পাখির হাড়, ওজন মাপার প্রাচীন সের-বাটখারা, লোহার পাল্লা, বাবুই পাখির বাসা, একশ’ দেশের প্রাচীন মুদ্রা, প্রাচীন রেডিও, মিশরের কাঠের ভাস্কর্য, পিতলের বদনা-চেরাগ, সাপ খেলা দেখানোর বীণ বাঁশিও।

এছাড়াও আছে সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো তালা, প্রাচীন রূপার মুদ্রা, টেলিফোন, ঘোড়ার চামড়া, প্রাচীন ঘড়ি, হরিণ-বুনো মহিষের শিং, প্রাচীন ছুরি, জমি মাপার লোহার শিকল, বেয়ারিংয়ের গাড়ি, গরুর কাইর, খড়ম, তাল গাছের নৌকা, ঢেঁকি, পালকী, কলের গান, এমনকি বাংলা সিনেমার প্রাচীন রিলও।

এসব জিনিসপত্রের বেশিরভাগই নতুন প্রজন্ম চেনে না। ব্যবহারও জানা নেই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সংগ্রহশালাটি আরও সমৃদ্ধ হতো এবং স্থায়িত্ব বাড়তো বলে দাবি করেন দর্শনার্থীরা।

আপাতদৃষ্টিতে এসবের কোনো মূল্য না থাকলেও এক সময় এগুলোই ছিল নিত্যব্যবহার্য। জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ। জিনিসগুলো একটি সময়কে ধরে রেখেছে। হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য। একটি দেশের ঐতিহ্য সে দেশের পরিচয় বহন করে। তাই ঐতিহ্যকে হারিয়ে যেতে দিতে নেই, টিকিয়ে রাখতে হয়।

/সনি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়