মৃত্যুর আগে স্বজনদের কাছে পেতে চান সেলিম মিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম
সেলিম মিয়ার বয়স যখন ১৮/২০ বছর, তখন অভিমানে বাড়ি ছাড়েন। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৪০ বছর। এখন তার বয়স ৬০। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ব্যাধি। দুইবার স্ট্রোকও করেছেন তিনি। এ কারণে এখন কথা বলতে মুখে জড়তা এসে গেছে। আধো আধো বুলি আওড়ান মাত্র।
জীবনের শেষ সময়ে এসে নিজের স্বজনদের একটিবারের জন্য চোখের সামনে দেখতে চান সেলিম মিয়া। তিন-চারদিন আগে তিনি তার স্ত্রী এবং শ্যালকদের কাছে এ সম্পর্কে নানা তথ্যাদিও দেন। এরপর এ বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. করিম মাহমুদ লিমন। তিনি তার ফেসবুকে স্বজনদের সন্ধান চেয়ে পোস্ট করেন।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকেলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং মামার বাজারের পাশে বাড়িতে কথা হয় সেলিম মিয়ার সঙ্গে। অস্পষ্টভাবে তিনি বলছিলেন, তার নাম সেলিম মিয়া। ১৯৮০/৮১ সালে চাঁদপুরের ফরাক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মেট্রিক পাস করেন। বাবার নাম মৃত আলকাছ আলী। তবে মায়ের নাম বলতে পারছিলেন না তিনি। দাদার নাম মৃত শামসুল হক পাটোয়ারী। আর তার বাড়ির পাশে মির্জি বাড়ি নামে একটি বাড়ি ছিলো।
গ্রামের নাম গুরিশা বললেও মনে করতে পারছিলেন না ইউনিয়নের নাম। অবশ্য জেলা এবং থানা হিসেবে বারবারই তিনি চাঁদপুরের কথা বলছিলেন। তিনি এও বলছিলেন, তার বাড়িতে চার ভাই ছিলো। বোন ছিল। তবে এখন আছে নাকি তা জানেন না। মেট্রিক পরীক্ষার পরে রাগ করে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। এখন তিনি বাড়িতে ফিরতে চান, একবার দেখতে চান স্বজনদের।
সেলিম মিয়ার শ্যালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে থেকে তিনি জাফলংয়ে অবস্থান করছেন। এখানেই আমার বোনকে বিয়ে করেছেন। এখন তাদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। এখন তিনি নানা রোগে ভুগছেন। আমরা চাই অন্তিম সময়ে এসে তিনি যেন তার পরিবারের দেখা পান। আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান পান।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে আমরা বেশ কয়েকবার তার কাছ থেকে তার পরিবারের তথ্য জানতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলেননি। অনেক চেষ্টার পরও তার কাছ থেকে স্বজনদের ঠিকানা পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সর্বশেষ তিন-চারদিন আগে তিনি তার বাল্যকালের কিছু তথ্য দেন। এতে তিনি চাঁদপুরে তার বাড়ি ছিল বলে উল্লেখ করেন।’
জাফলং মোহাম্মদপুর মিতালী সবুজ সংঘের সভাপতি মো. রুবেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। তিনি আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের সকলের দাদার বাড়ি, মামার বাড়ি আছে, কিন্তু উনার কোনো আত্মীয়-স্বজনকে কখনও আসতে দেখিনি। এজন্য উনাকে বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি। পাড়া-প্রতিবেশী হিসেবে জানতে পারি, তিনি ৪০ বছর এখানে অবস্থান করছেন। এখানে তিনি বিয়ে করে বসবাস করছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘তিনি ভদ্র মানুষ। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি ১৯৮০/৮১ সালে চাঁদপুর জেলার ফরাক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। এরপর ওই বছরে পরিবারের সঙ্গে রাগ করে সিলেটে চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি জাফলংয়ে অবস্থান করছেন।’
অন্তিম মূহুর্তে সেলিম মিয়ার যেন স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়, এ জন্য চাঁদপুরবাসীর প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি। কেউ কোনো তথ্য পেলে কিংবা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে ০১৭১২-৩১৭০৪৬ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন মো. রুবেল আহমেদ।
নোমান/বকুল