ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা থেকেই গিনেস বুকে নাম রাসেলের

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০১:৩২, ১ আগস্ট ২০২১
কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা থেকেই গিনেস বুকে নাম রাসেলের

গিনেস কর্তৃপক্ষের সনদ হাতে রাসেল

ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে রাসেল ইসলাম। দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে হয়েও মাত্র ১৮ বছর বয়সে এক পায়ে দড়ি লাফিয়ে (স্কিপিং রোপে) গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল ইসলাম। এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডে ১৪৫ বার ও এক মিনিটে ২৫৮ বার দড়ি লাফিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল লাফিয়েছেন ১৪৫ বার। ১ মিনিটে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড ছিল। রাসেল সেই রেকর্ড ভেঙে করেছেন ২৫৮ বার।

রাসেল ঠাকুরগাঁও শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র।

রাসেল বলেন, ‘নিজের ইচ্ছাশক্তি ও কিছু করার প্রবল আকাঙ্খা এই সফলতা এনে দিয়েছে। স্কুলে থাকার সময়ই ঠাকুরগাঁও রোলার স্কেটিং ফেডারেশন আমাকে ঢাকা নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আমাকে গুরুত্ব দেয়নি কেউ। অনেকে আমার খেলা দেখে হাসাহাসি করত। তখন কিছু করে দেখানোর জেদ জন্ম নেয়।’

২০১৭ সাল থেকেই স্কিপিং রোপ খেলা শুরু করেন রাসেল। একসময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপে প্রথম হন তিনি। বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে অশংগ্রহণ করলে অনাবশ্যক কারণে তাকে বাতিল করা হয়। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা নেন একদিন এই খেলায় বিশ্ব রেকর্ড গড়ার। সেই থেকে বাসার আশেপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছেন তিনি।

অবশেষে নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করেন রাসেল। স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি ১ মিনিটের।

আবেদনের তিন মাস পর গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড থেকে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই পান রাসেল। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ কিছু ভিডিও চায় তার কাছে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারও বিস্তারিত দেওয়া হয়। 

এরপর কিছুদিন আরও মনোযোগ দিয়ে চর্চা করে সেই ভিডিওগুলো ধারণ করে পঠিয়ে দেন রাসেল। অবশেষে বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড করেন রাসেল। গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ডাকযোগে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের পাঠানো দুটি সনদ পত্র (সার্টিফিকেট) হাতে পান রাসেল। 

তার লক্ষ্য এখন সাউথ এশিয়ান গেমস। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করা।


রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘গরিব কৃষক হয়েও ছেলেকে যথাসাধ‌্য সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলেকে এখন বিশ্ববাসী চেনে। সে দেশের জন‌্য গৌরব বয়ে এনেছে। সেজন‌্য ভালো লাগছে। আমি ছেলের জন‌্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থী।’

রাসেলের বড় ভাই আরিফ বলেন, ‘আমার ছোট ভাই এতো বড় কিছু অর্জন করবে কখনও ভাবিনি। আমরা বিশ্বাস করতেই পারিনি সে বিশ্ব রেকর্ড করবে। আমরা গরিব। তাকে সেভাবে সহযোগীতা করতে পারিনি। সে নিজে নিজেই এতদূর এগিয়েছে। আশা করি সে আরও ভালো কিছু করবে।’

৮ নম্বর রহিমানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হাসান মেহেদী বলেন, ‘এমন প্রত্যন্ত ও দূর্গম এলাকা থেকে বিশ্ব রেকর্ড করবে সে এটা আমরা ভাবতে পারিনি। তার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত।’

ঠাকুরগাঁও ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, ‘রাসেল দেশের তথা আমাদের জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে। তার জন্যে শুভ কামনা রইলো। সে কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগীতা ছাড়াই এ অর্জন করেছে। সত্যি অবাক হয়েছি। আগামীতে তার যেকোনো সহযোগীতায় আমরা পাশে থাকব।’ 

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড একটি সম্মানজনক অর্জন। আমাদের দেশের জন্য এটি গৌরবের। আমি তাকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাচ্ছি। আগামীতেও সে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ুক এই কামনা করছি। কোনো প্রয়োজন হলে তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করা হবে।’

হিমেল/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়