নাতির অত্যাচারে ভিটেছাড়া আমেনা বেগম বিচার চান
মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর || রাইজিংবিডি.কম

আমেনা বেগম
নাতির অত্যাচারে ঘর ছাড়া দিনাজপুরের হিলির ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা বেগম। অমানবিক অত্যাচার আর মাথা গোজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও'র কাছে ন্যায্য বিচারের আশায় ঘুরছেন তিনি।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের কুশাপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম (৯০)। ৩০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। এক মেয়ে সন্তানকে অনেক কষ্টে, পরম যত্নে বড় করে এবং বিয়ে দেন। মেয়ে আর নাতি-নাতনি নিয়ে স্বামীর রেখে যাওয়া তিন শতকের ভিটের উপর থাকতেন আমেনা বেগম। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একমাত্র মেয়েটিও মারা যায়। বৃদ্ধ বয়সে দিনরাত পরিশ্রম করে নাতি-নাতনিকে বড় করেন। বৃদ্ধা আমেনার বয়স এখন নব্বইয়ের ঘরে। স্বাভাবিকভাবে
চলতে ফিরতে পারেন না তেমন। লাঠির উপর ভর করে কোন রকমে হাঁটাচলা করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে তার।
নাতি শাহা আল নানী আমেনা বেগমকে বিভিন্ন আশা দেখিয়ে তার শেষ সম্বলটুকু বাড়িভিটে নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি ছিলো যতদিন নানী বেঁচে থাকবেন ততিদন নাতি শাহা আলম তার সব ভরণপোষণ চালিয়ে যাবে। কিন্তু কোন শর্তও পালন করছেন না নাতি। বৃদ্ধ বয়সে এখন প্রায় সময় তাকে অনাহারে থাকতে হয়। খাদ্য-খাবার আর পোশাকাদি দেয় না নাতি। নিষ্ঠুরতার চরম পর্যায়ের শিকার হয়েছেন বৃদ্ধা আমেনা বেগম। শারীরিক অত্যাচার করে নাতি শাহা আলম তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, এমন অভিযোগও মিলেছে।
সব হারিয়ে আজ স্বামীর ভিটেবাড়ি টুকুও হাতছাড়া হয়ে গেছে এই বৃদ্ধার। বৃদ্ধ বয়সে দিশেহারা আমেনা বেগম। ন্যায্য বিচার আর স্বামীর ভিটেবাড়ি ফিরে পাবার আশায় বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর সহ ঘুরছেন তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে।
বৃদ্ধা আমেনা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, 'মোর তোরা বিচার করে দেন? মুই আর অত্যাচার সহ্য করবা পারছু না। নাতি কইছে খাওন দিবি, কাপড়া দিবি, যতিদিন মুই বাঁচমু সব দিবি। এই বলে মোর তিন শতক জায়গা-কুনা লিখে নিছে। এখন ক্যাছুই (কিছুই) দেয় না। ঘাড়ধাক্কা দিয়ে মোক বায়ীত্তে (বাড়ি থেকে) বেড় করে দেছে। তোরা এর বিচার করে দেন, মোর স্বামীর ভিটেবাড়ি নিয়ে দেন বাহে?'
উপজেলার ৩ নং আলীহাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন রাইজিংবিডিকে জানান, আমেনা বেগমকে আমি চিনি এবং জানি। তার নাতি তার বাড়ির জায়গাটুকু লিখে নিয়েছে এবং তার কোন ভরণপোষণ দেয় না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও আমাকে বৃদ্ধা আমেনার বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সমাধানের ব্যবস্থা করবো।
হাকিমপুর (হিলি) থানা অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ রাইজিংবিডিকে জানান, আমি ঐ বৃদ্ধা মহিলার বিষয়ে জানতাম না, এখন জানলাম। বিষয়টি অমানবিক, উনি একজন খুবই বয়স্ক মানুষ। আমি অবশ্যই সরেজমিনে তদন্তের জন্য পুলিশ পাঠাবো এবং এর আইনুগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম রাইজিংবিডিকে জানান, আলীহাট ইউনিয়নের কুশাপাড়া গ্রামের বয়স্ক আমেনা বেগম তার বিচার চাইতে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বিষয়টি উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। চেয়ারম্যান বিয়ষটি তদন্ত সাপেক্ষে সমাধান করবেন এবং প্রয়োজনে আমি নিজেই ঐ বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে তার সমস্যার সমাধান করবো।
এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলার চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার কাছে কুশাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা মহিলা আমেনা বেগম তার নাতির বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তিনি একেবারেই বৃদ্ধ মানুষ, বিষয়টি অমানবিক এবং দুঃখজনক। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি এর সঠিক ব্যবস্থা নিতে, প্রয়োজনে ইউএনও'কে নিয়ে আমি সরেজমিনে যাবো।
দিনাজপুর/মোসলেম উদ্দিন/এমএম