ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

প্রতিহিংসার কুড়ালে আমবাগান কেটে সাফ!

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১৪ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৬, ১৫ আগস্ট ২০২১
প্রতিহিংসার কুড়ালে আমবাগান কেটে সাফ!

রাগ দুঃখ ও ক্ষোভে স্তব্ধ হয়ে গেছেন কলেজ শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান। ভাবছেন, কি ভুল করেছিলাম আমি। আম বাগানের কয়েকশ’ কাটা গাছের দিকে চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে বলছেন, এত নিষ্ঠুর হতে পারে মানুষ!

মো. কামরুজ্জামান শিক্ষকতা করান কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজে। চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের পাগলা নদী সংলগ্ন ৪ ও ৫ নম্বর বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকায় তার শখের এবং আয় উপার্জনের আমবাগান ছিল। 

ছিল বলতে হচ্ছে এই কারণে যে এই বাগানের প্রায় বিভিন্ন জাতের প্রায় দুই শতাধিক আম গাছ এখন টুকরো টুকরো হয়ে মাটিতে! ৬ বিঘা জমিতে পরম যত্নে লাগানো এই আমগাছগুলো কুড়াল, দা দিয়ে কেটে মাটিতে ফেলে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। 

আম বাগানে স্থানীয় রাখালদের গরু চড়াতে নিষেধ করেছিলেন মো. কামরুজ্জামান। সেই নিষেধাজ্ঞা শুনে প্রতিহিংসার তেজে দুর্বৃত্তরা গত মঙ্গলবার (১০ আগষ্ট)  রাতের আঁধারে বাগানের প্রায় দুশোর বেশি গাছ কেটে ফেলে। ধ্বংস করে ফেলে পুরো আমবাগান।  

ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিক কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান এই বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন। 

আম বাগানের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, পাগলা নদী সংলগ্ন ৪ ও ৫নং বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেক বড় আম বাগান রয়েছে। কিন্তু পদ্মার চর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রত্যেক বছরের এই সময়ে গরুর পালের রাখালরা আম বাগানে গরু চড়ায়। সে সময়ে গরু আম গাছের পাতা, ডাল ও গাছের ক্ষতি করে। এনিয়ে এই এলাকার সব বাগান মালিকরা এর আগেও রানিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহসিন আলীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন। 

অভিযোগের ভিত্তিতে চেয়ারম্যানের নির্দেশে মাঠের ফল আর ফসল রক্ষার্থে ২০ সদস্যের একটি মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামান। বাগানের সকল আম পাড়া শেষে প্রতি বছরের মতোই এ বছরের গত ৮ আগষ্ট ওই মাঠের বাগানগুলোতে গরু না চড়ানোর নির্দেশ দিয়ে; এলাকাতে মাইকিং করা হয়। তার একদিন পরই মাঠ কমিটির কোষাধ্যক্ষ কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামানের আম বাগানের প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন জাতের আম গাছ কেটে ফেলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটল।  

 বাগান মালিক কামারুজ্জামান জানান,  বাগানের সবগুলো গাছ রাতের অন্ধকারে মাঝখান থেকে কেটে দেয়া হয়েছে। আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, হিমসাগরসহ উন্নত নাবি জাতের বিভিন্ন আমের বাগান গড়ে তুলেছিলাম। এ বছরও প্রতেকটি গাছে প্রচুর পরিমানে আম এসেছিল। তিল তিল করে গড়ে তোলা আম বাগান রাতের আঁধারে শত্রুতা করে নিমিষেই মাটিতে মিশিষে দিল দুর্বৃত্তরা। 

তিনি বলেন, বাড়ির পাশের কলেজে চাকুরি করার সুবাদে বেশিরভাগ সময় অবসরে বাড়িতে থাকি। সেই সূত্রে অধিকাংশ সময় বাগানে এসব আম গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতাম। আমার প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল। কয়েক বছর থেকে রাখালরা আম বাগানে গরু চরিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে আসছিল। নিষেধ করতে গেলে গরুর মালিক ও রাখালরা বিভিন্ন উচ্চবাচ্য করে এবং হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে এলাকায় মাইকিং করা হয় বাগান এলাকায় গরু না চরানোর জন্য। এতে করে আমার উপরে গরুর রাখালরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলেছে। 

মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি আকবর আলী বিশ্বাস জানান, ঘটনাটি যেহেতু রাতের অন্ধকারে হয়েছে, তাই সুনির্দিষ্ট করে কাউকে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, গরু চরাতে মানা করে মাইকিং করায় গরুর মালিক ও রাখালরা এই  কাজটি করেছে। কয়েকজনকে সন্দেহ করা হয়েছে, তাদের নাম লিখে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মহসিন আলি বলেন, রাতের অন্ধকারে গাছ কাটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক একটি অপকর্মের দৃষ্টান্ত। মাঠ রক্ষা কমিটির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আমি শুরু থেকেই অবহিত। এ কাজ যে করুক, তার ক্ষমা নাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ/শিয়াম/এমএম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়