ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ৩ ১৪৩১

সাতছড়ির বাঙ্কারে অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো কার?

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ১৫ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৯:০৭, ১৫ আগস্ট ২০২১
সাতছড়ির বাঙ্কারে অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো কার?

সাতছড়ি উদ‌্যানের বাঙ্কার থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র গোলাবারুদ (ফাইল ফটো)

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে থেকে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছয় দফা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা-বারুদ জব্দ করে র‌্যাব। চলতি বছরে (২০২১ সাল) সপ্তম দফায় ২ ও ৩ মার্চ অভিযান চালিয়ে ১৮টি কামান বিধ্বংসী রকেট সেল জব্দ করে বিজিবি। সর্বশেষ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অষ্টম দফা অভিযানে এ উদ্যানের একটি সেতুর পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯টি একনলা বন্দুক, ৩টি পিস্তল ও ১৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ৫৫ বিজিবির হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএনএম সামীউন্নবী চৌধুরী।

রোববার (১৫ আগস্ট) সকালে তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকা নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। পরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ জব্দ করা হয়। অভিযান আপাতত স্থগিত করা হলেও ওই এলাকায় নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে থেকে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ছয় দফা অভিযানে ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৯টি মেশিনগান, আটটি ম্যাগাজিন, একটি বেটাগান, ছয়টি এসএলআর, একটি অটোরাইফেল, নয়টি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড রাবার বুলেট, ২৫০ গুলি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আটটি বেল্ট, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি রেডিও, এসএমজি ও এলএমজির ৮ হাজার ৩৬০ রাউন্ড গুলি, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড গুলি, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ড ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট, ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট ও ১৩টি রকেট লঞ্চারের শেলসহ বেশকিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করে র‌্যাব।

১৯১২ সালে ১০ হাজার একর পাহাড়ি জমি নিয়ে রঘুনন্দন হিলস রিজার্ভ গঠিত হয়। এরপর ৩৭৫০ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা পায় সাতছড়ি রেঞ্জ। সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বিট নিয়ে এ রেঞ্জ পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০০৫ সালে ৬০০ একর জমিতে উদ্যান করা হয়। এ উদ্যানের ভেতরে প্রায় ২২টি আদিবাসী পরিবার বসবাস করছে। এ পাহাড়ে ঘর ও ক্যাম্প নির্মাণ করেছিল উগ্রপন্থীরা। এসবের চিহ্ন এখনও পাওয়া যায় সাতছড়ির বিভিন্ন টিলায়। সাতছড়ি উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর পেছনে নির্জন টিলায় ওপর গিয়ে ঝোপঝাড়ের নিচে একটু তাকালে দেখা যাবে, পুরনো ঘর ও ক্যাম্পের চিহ্ন। অস্ত্রগুলো এসব টিলার বিভিন্ন বাঙ্কার থেকে উদ্ধার হয়েছে।

১৯৯০ সালের দিকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (টিপিডিএফ), ন্যাশনাল লিবারেল ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি), ইউনাইটেড লিবারেশন অব আসাম (আলফা), অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ), ট্রাইবাল ফোর্স, ত্রিপুরা কিংডম, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), রয়েল বরাক আর্মি (আরবিএ) সাতছড়িসহ তার আশাপাশ আদিবাসী এলাকায় অবস্থান নেয়। এসব সংগঠনকে উগ্রপন্থী হিসেবে চিনতেন স্থানীয়রা।

একসময় স্থানীয়দের হাত করে উগ্রপন্থীরা সাতছড়ি পাহাড়সহ বিভিন্ন নির্জন স্থানে আস্তানা তৈরী করে। এসব আস্তানায় কী হতো, বাইরের সাধারণ মানুষ কিছুই জানতে পারত না। এর ফাঁকে এসব সংগঠনের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নেয়।

অবশ্য ২০০৪ সালের ১১ অক্টোবর সাতছড়ি সীমান্ত ফাঁড়ির বিডিআর সদস‌্যরা অনুপ্রবেশের দায়ে সাতছড়ি থেকে ১৮ জন উগ্রপন্থীকে আটক করে চুনারুঘাট থানায় হস্তান্তর করে। তারা তিন মাস জেলবাস করে মুক্তি পায়। পরে তারা ত্রিপুরা গেলে সেখানেও আইনপ্রয়োগকারীদের হাতে আটক হয়। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সাতছড়ির অবস্থান প্রকাশ হয়ে যায়। এরপর থেকে সাতছড়ি উদ‌্যানে উগ্রপন্থী আস্তানার কার্যক্রম শিথিল হতে থাকে।

পরে ২০০৭ সালে দেশে সেনা শাসনকালে তাদের প্রায় কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেলে সাতছড়ির নির্জন টিলায় তৈরী ঘর ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। একসময় এসব ঘর ও ক্যাম্পগুলো পরিণত হয় জোপঝাড়ে। তারপর তাদের কার্যক্রম চলে অন্যভাবে।

এখানে র‌্যাব ও বিজিবি ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত আট দফায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কাউকে আটক করতে পারেনি। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে, এখানে কারা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখেছে, তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না। তাই, অনেকের প্রশ্ন—এখানে কারা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখেছে? 

মামুন/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়