চা বাগানে শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি জ্বর-সর্দির প্রকোপ
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি জ্বর ও সর্দির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। বাড়িতে থেকেই রঙ চা পান ও সাধারণ ওষুধ সেবন করছেন। অনেকে আবার জ্বর ও সর্দি নিয়ে কাজে যোগদান করছেন।
চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের বাসিন্দা চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে গান-নাটকের মাধ্যমে কাজ করে আসা দেউন্দির প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘বাগানে বাগানে শ্রমিক পরিবারের প্রায় বাড়িতেই সর্দি ও জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ সময়ে শ্রমিকদের উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ নেই। কারণ, তাদের নেই টাকা। তাই শ্রমিকরা বাগানেই অবস্থান করে সাধারণ ওষুধ সেবন করছেন। পান করছেন খাঁটি চা পাতার রঙ চা। এতে অনেকেই এসব রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। নমুনা দিতে হলে জেলা ও উপজেলা শহরে যেতে হবে বিধায়, শ্রমিকরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতেও রাজি নয়। শহরে যেতে গাড়ি ভাড়া নেই অনেক শ্রমিকের।’
তিনি জানান, জেলার পাহাড়ি এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছোট-বড় মিলে চা বাগান রয়েছে ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা দেড় লাখের বেশি। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। সারাদিন পরিশ্রম করে তারা যা আয় করে, তা দিয়ে তাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা।
প্রতিদিন একজন শ্রমিককে ২৩ কেজি চা-পাতা উত্তোলন করতে হয়। তাতে তিনি পান ১২০ টাকা। মজুরি ও রেশন মিলিয়ে একজন শ্রমিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা আয় করেন। যেখানে একজন খেতমজুরের আয়ও ৫০০ টাকা। একজন রিকশাচালকের আয় ৬০০ টাকা। সনাতন ধর্মাবলম্বী চা-শ্রমিকরা দুর্গাপূজা ও হোলি উৎসবে অল্প কিছু টাকা ভাতা পান। ঈদের দিন ও পরের দিন বাগানের শ্রমিকরা ছুটি পান।
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের জীবন চালানো প্রায় অসম্ভব। উৎসবেও তাদের মনে আনন্দ থাকে না। অভাবের তাড়নায় আনন্দ করতেও ভুলে গেছেন তারা। যদিও দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি করার দাবি উঠেছে। মজুরির স্বল্পতায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে আন্দোলনও করছেন তারা।
জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের শ্রমিক বৃষ্টি রায়, নয়ন কালিন্দী আকালি সাঁওতাল, সমরা মুড়া, অনিল বাড়াইক, তুষার রাজগড়, শাকিল বাউরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ১২০ টাকায় তাদের কিছুই হয় না। এক বেলা খেলে অন্য বেলায় উপোস থাকতে হয়। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তাই এভাবে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে জ্বর ও সর্দি কিছু আসে যায় না। বাগানেই বসে প্যারাসিটামল ও চা পান করছি। এতেই সেরে যায় সর্দি ও জ্বর।’
দেউন্দির ন্যায় জেলার বিভিন্ন বাগানের শ্রমিক ও তাদের নেতাদের সাথে কথা বলে একই ধরণের মন্তব্য পাওয়া গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা জানান, যেখানে পরীক্ষা নেই, সেখানে করোনা কোন শ্রমিকের আছে বলা দায়। শ্রমিকরা বাড়িতে বসে প্যারাসিটামল ও লাল রঙের চা পান করেই ভালো হয়ে যাচ্ছে। এখানে আর কিছু বলার নেই।
মামুন/আমিনুল