বাড়ছে পানি, ভাঙছে নদীর পাড়
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ফারাক্কা থেকে নেমে আসা গঙ্গা-পদ্মার শাখা প্রশাখায় প্রবাহিত বানের জল উপচে প্লাবিত হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলার নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট, শিলাইদহ ও গড়াই নদীর রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির এই ধারা আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা-গড়াইয়ে পানি বাড়ার কারণে ইতোমধ্যেই জেলার নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এসব মানুষের জন্য আরো বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে নদী ভাঙন। পানির গতিপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়ার দপ্তরে প্রেরিত সতর্কবার্তায় জেলার নদী ভাঙন প্রবণ ২৫টি স্পটকে শনাক্ত করে সেখানে জরুরী সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় জরুরী আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন।
তবে প্লাবণ, ভাঙনসহ উপদ্রুত এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার যথেষ্ট সক্ষমতা তাদের নেই বলেও জানালেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।
জেলার ৬টি উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সব কয়টি উপজেলাতেই নিম্নাঞ্চলের কৃষিজমি ও বসতবাড়ী প্লাবিত এবং কোথাও কোথাও পাড় ভাঙনের শিকার হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে নদীর পাড় ভাঙনের মুখে জেলায় সরকারি-বেসরকারি ও জনপদ ক্ষতির শিকার হওয়া ১৪টি স্পটে জরুরী আপদকালীন পদক্ষেপ হিসেবে ভাঙন ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগে ফেলানো হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এসব স্পট হলো- দৌলতপুর উপজেলার চিলমারি, ফিলিপ নগর ও মরিচা। ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ও রায়টা ঘাট। মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার শেখ রাসেল কুষ্টিয়া হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও স্কুল মাদ্রাসা। কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর, কোমরভোগ, শিলাইদহ, চাপড়া ও তেবাড়িয়া। খোকসা উপজেলার কালিবাড়ি ও ওসমানপুর আবাসন প্রকল্প।
এছাড়াও স্যাটেলাইট (সিজিআইএস) হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নদী ভাঙনের অধিক ঝুকিপূর্ণ স্পট হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে চিহ্নিত হয়েছে হেলালপুর, উসমানপুর, আবেদের ঘাট, কুলদিয়া, ভুড়কা, পুরাতন কুষ্টিয়া, শিমুলিয়া, কমলকান্তি, গনেশপুর, তেবাড়িয়া, এনায়েতপুর, লালপুরসহ প্রায় ২৫টি স্পটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গড়াই নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শেখ রাসেল কুষ্টিয়া হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঠেকাতে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশল মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে যে পরিমান ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাগ সরবরাহের চরম ঘাটতি রয়েছে। সে কারণে কাজের গতিও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় করতে পারছিনা। বলতে পারেন টাকা দিয়েও চাহিদা মতো জিও ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না।
ঠিকাদার হবিবর রহমান বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার হওয়ায় তাৎক্ষনিক এসব জরুরী কাজের বোঝা আমাদের ঘাড়েই চাপানো হয়। আমরাও করি। কিন্তু সমস্যা হলো প্রতি বছরই এধরনের কমবেশি জরুরী কাজ করে দেই ঠিকই কিন্তু এসবের বিল পেতে আমাদের চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। কবে এ কাজের বিল পাবো তা বলা মুশকিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, পদ্মা-গড়াইয়ের সব কয়টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেখানেই সমস্যা সৃষ্টি হবে গুরুত্ব বিবেচনায় সেখানেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে জরুরী কাজের পরিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন সোর্সকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি।
কাঞ্চন কুমার/টিপু