ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ১৮ ১৪৩১

নীলের পাড়ায় শাপলার মেলা

রেজাউল করিম, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ২২ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৪:০০, ২২ আগস্ট ২০২১
নীলের পাড়ায় শাপলার মেলা

দিগন্তজুড়ে ফুটছে নয়নাভিরাম লাল শাপলা। যেন একটি লাল গালিচার রাজ্য। রোদ ঝলমলে বিলের জলে প্রভাতে রঙ-বেরঙের শাপলায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। প্রকৃতিপ্রেমীদের বরণ করে নিতে লাল জামা পরে জলের উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই ফুলগুলো।

গাজীপুর শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে সবুজ-শ্যামল ছায়ায় ঘেরা একটি গ্রাম নীলের পাড়া। এ গ্রামের পাশেই রয়েছে ছোট-বড় অনেক বিল। এমনই একটি বিল হলো ‘পোড়াহারা’।  এই বিলটি গ্রামের মানুষের কাছে প্রকৃতির আর্শীবাদ। 

এই পোড়াহারা বিলে বর্ষার পানি বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে শাপলা। লাল শাপলার সঙ্গে নীল শাপলার সৌন্দর্যও নজর কাড়ে ভ্রমণ পিপাসুদের। আছে সাদা শাপলার দুধরঙা শুভ্রতা। লাল না সাদা, নাকি নীল কোনটার সৌন্দর্য বেশি? লালের মধ্যে আছে রঙের তারতম্য।  রৌদ্রস্নাত বিলের আর ছায়াঘেরা বিলের শাপলার হালকা-গাঢ় রঙের তফাৎ বিস্তর।

নীলেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গাজীপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মন্ডল মাধব চন্দ্র বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষ বিলটিকে পোড়াহারা বলেই চেনে। এই বিলে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে ছোট-বড় দেশীয় মাছ ধরা পড়ে। তবে এ বিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বিলে ফুটে থাকা অসংখ্য লাল শাপলা। শাপলা প্রজাতির মধ্যে প্রায় তিনটি প্রজাতি এখানে দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে লালটাই বেশি মুগ্ধকর। 

নীলের পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিজয় চন্দ্র মন্ডল। তিনি এই পোড়াহারা বিল থেকে শাপলা ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ভোর ৫টা থেকে ছোট ডিঙি নৌকায় বিলের মাঝখানে চলে যান বিজয় চন্দ্র। ৯টা পর্যন্ত শাপলা তুলে নিয়ে যান শহরে।

শহর থেকে দূরত্ব কম থাকায় যান্ত্রিকতা ভুলতে প্রতিদিন অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী আসেন এই লাল শাপলার গ্রামে। এখানে এসে উপভোগ করেন সৌন্দর্য শোভিত মনোরম দৃশ্য।

বিলে ঘুরতে আসা গাজীপুর শহরের বাসিন্দা মো. ইমরান হোসেন বলেন, লোকমুখে শুনে এই বিলে শাপলা দেখতে এসেছি। শাপলা যেমন চোখের তৃপ্তি মেটায়, তেমনি শাপলা সুন্দরী রমণীর খোঁপায় শোভা পায়। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে এখানে এসে খুবই আনন্দিত। বিশেষ করে এই বিলের লাল শাপলা আমাকে মোহিত করেছে।

বাংলা সাহিত্যের সব সাহিত্যিকই শাপলা ফুলকে করেছে সাহিত্যের উপকরণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দিন, নজরুল, জহির রায়হান থেকে শুরু করে সবার কবিতা, গানেও রয়েছে শাপলার কদর। শাপলা আমাদের গ্রামের কথা বলে। আমাদের অস্তিত্বের কথা বলে। তাইতো এই বিলে ঘুরতে আসলে মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠবেন, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল, নাকি তোমার মন...’।

/মাহি/ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়