ঢাকা     রোববার   ০৯ মার্চ ২০২৫ ||  ফাল্গুন ২৪ ১৪৩১

তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ২৩ আগস্ট ২০২১  
তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো কৃষক

জীবিকার তাগিদে ২০০৮ সালে আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন (৩৯)।

প্রবাস জীবন ভালই কাটছিলো তার। ২০১৪ সালে হঠাৎ করে কর্মস্থলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। এতে ডান হাতের কব্জি হারাতে হয় তাকে।  কর্মরত কোম্পানি কোন ধরনের সাহায্য না করায় দেশ থেকে জমি বিক্রি করে প্রবাসে চিকিৎসা করাতে হয়। ২০১৫ সালে কব্জি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়। দেশে এসে অকেজো হাতের জন্য কোন কাজকর্ম না করতে পেরে আরো অসহায় হয়ে পড়েন মুক্তার হোসেন। পরে এক হাত নিয়েই বাড়ির আশপাশের কৃষি কাজে মনোযোগ দেন মুক্তার। আস্তে আস্তে এক হাতে শিখে ফেলেন কাজকর্ম করা এবং সফলও হন। বাড়ির পাশে ছোট্ট একটি দোকানও দেন।

কৃষি কাজে নেমে আরেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ৩ বছর ধরে কৃষি কর্মকর্তার পিছনে ঘুরেও সরকারি বীজ, গাছ ও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না তিনি।  

বিজয়নগর উপজেলার ১০নং পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটিদাউদপুর গ্রামে স্ত্রী, মা ও এক ভাইকে নিয়ে মুক্তার হোসেনের সংসার।

কথা হলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের কাছে তিন বছর ধরে বলে আসছি আমাকে যেন সরকারি বীজ, গাছ বা কিছু সহায়তার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা আমাকে কিছুই দিচ্ছেন না। কৃষি বরাদ্দ পেতে হলে নাকি কৃষি সমিতির লোক হতে হবে, আমি সেটাও হতে চেয়েছি কিন্তু আমাকে সমিতিতেও রাখা হচ্ছেনা।

মুক্তার হোসেন বলেন, বাড়ির আশপাশে আমার জমি আছে। সরকারি কিছু গাছ, বীজ পেলে কৃষিকাজ করে সংসারটা ভালভাবে চালাতে পারতাম। আমি কৃষি কর্মকর্তার বাড়িতেও গিয়েছি তাও পাইনি কিছু। কৃষি কর্মকর্তা যে সমিতির কথা বলছে, সেখানে যারা সমিতিতে থেকে সরকারি সহায়তা পাবে তাদের কৃষি করার জায়গা থাকতে হবে। আমার প্রতিবেশি দুইজন সমিতির মাধ্যমে কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন অথচ তারা যে চাষ করবেন তাদের সেই জায়গাই নাই।  কথাগুলো বলতে গিয়ে মুক্তার হোসেন কেঁদে ফেলেন।

উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মুক্তার হোসেন আমার কাছে এসেছিলেন কিন্তু কোন বরাদ্দ না থাকায় দিতে পারিনি। সামনে কোন বরাদ্দ আসলে তাকে সহায়তা করা হবে।

বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নিয়মের বাইরে কেউ সহায়তা পায় না। তিন বছর হাতের কব্জি হারিয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে বলেও সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না কৃষক মুক্তার হোসেন। এ প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, আমি খবর নিয়ে মুক্তার হোসেনের জন্য কিছু করা যায় কিনা দেখব।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল হক মজুমদার বলেন, যে এক হাতেও কৃষি কাজ করতে চায় তাকে অবশ্যই সাহায্য করা উচিত। আমি উপজেলা ও ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তাদের বলে দিবো যেন মুক্তার হোসেনকে সরকারি সহায়তা করা হয়।

মাইনুদ্দীন রুবেল/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়