মাগুরায় পাকা ঘরের মেঝেতে গোপনে মৃতদেহ দাফন নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড
মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মাগুরা সদরের পৌর এলাকায় এক ব্যক্তি মুত্যুর পর পাকা বাসভবনের মেঝের উপর কবর দেওয়ার ঘটনা নিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড শুরু হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির নাম তৈয়ব আলী মোল্যা (৭৫)। তিনি জেলা সদরের পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিনাথপুরের কারিগর পাড়ার বাসিন্দা, মৃত আরজু মোল্যার ছেলে।
পুলিশ, মৃতের স্বজন ও প্রতিবেশিরা জানান, তৈয়ব আলী মোল্যা গত রোববার (২২ অগাস্ট) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে বাড়িতে মারা যান। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী একতলা বসত ঘরের মেঝেতে গোপনে লাশ দাফন করা হয়। তিনি অজ্ঞাত কোনো ভিন্নমতাবলম্বী আধ্যাত্মিক ব্যক্তির অনুসারী ও ভক্ত ছিলেন বলে তারা জানান।
সরেজমিনে আজ গিয়ে জানা গেছে, তৈয়ব আলী মোল্যা অবিবাহিত ছিলেন। একটানা ৩০ বছর তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। এক বছর আগে তিনি শহরের ছোট ভাই কাশেম আলীর বাড়িতে আসেন। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতেন না। মিশতেন না। নিজ হাতে বাড়িতে দুই কক্ষের একটি ভবন তৈরি করেন। একটি কক্ষের জানালা রয়েছে। আরেকটি কক্ষের দরজা থাকলেও কোনো জানালা নেই। লাশ দাফন শেষে ওই রুমের দরজা ইট গেঁথে প্লাস্টার করে বাইরে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মুত্যুর পর তাকে পাশের কক্ষের কংক্রিটের মেঝের উপর স্বজনদের কবর দিতে বলেন। মৃত্যুর পর স্বজনরা গোপনে কবর দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
গতকাল রোববার (২৯ অগাস্ট) কাশিনাথপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তৈয়ব আলীর ঘরের সামনে উৎসুক লোকজন ভিড় করছেন। দুইরুমের একটি কক্ষের মেঝেতে কবর দেওয়া হয়েছে তাকে। মেঝেতে মরদেহের চারপাশে ইটের দশ-ইঞ্চি প্রশস্থ ইটের গাঁথুনি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এরপর ঢালাই করে উপরের অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তার বেশ কয়েকজন অনুসারী ও ভক্ত বর্তমানে অবস্থান করছেন।
তাদের একজনে আমজাদ আলী। বাড়ি, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘ঘরের মধ্যে লাশ দাফন নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেকেরই লাশ ঘরের মধ্যে দাফন করা হয়েছে।’
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। তাকে বাইরে কবরস্থানে দাফন করার দাবি জানান এলাকার লোকজন। কিন্তু তৈয়ব আলীর স্বজনেরা লাশ নতুন করে বাইরে দাফন না করতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এতে এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদিন রোববার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে আজ (সোমবার) সকাল দশটার মধ্যে গোরস্থানে দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন।
সুজন শেখ, কামাল হোসেনসহ পাঁচজন প্রতিবেশী এই প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি এলাকায় দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। উত্তেজনা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে গোসল ও জানাজার পর লাশ গোরস্থানে দাফনের জন্য ব্যবস্থা নিতে তারা দাবি জানিয়েছেন।
মৃতের ছোটভাই কাশেম আলী মোল্যা জানান, বড় ভাই (তৈয়ব) মৃত্যুর আগে নিজ হাতে ঘর ও ঘরের মধ্যে কবর তৈরি করে গেছেন। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী লাশ ঘরের মধ্যে দাফন করা হয়েছে।
মাগুরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মকবুল হাসান মাকুল জানান, প্রশাসন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আলেমদের সাথে আলোচনা করে ১ নম্বর, ওয়ার্ডের কাশিনাথপুরের কারিগর পাড়ায় এক ব্যক্তির লাশ ঘরের মধ্যে দাফনের বিষয়টি তাদের সহায়তায় সমাধানের চেষ্টা করছি।
মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘লাশটি উত্তোলন করে ইসলামিক বিধি মেনে দাফনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
শাহীন/আমিনুল