ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

ভ্রমণ পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটায় মির্জাপুর শাহী মসজিদ

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৯, ৩১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১১:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০২১
ভ্রমণ পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটায় মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মুঘল আমলের স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম এক নিদর্শন মির্জাপুর শাহী মসজিদ। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদটি। আনুমানিক সাড়ে ৩০০ বছরের পূর্বে স্থাপিত মসজিদের নির্মাণে নিপুণতা ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য এখনো দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।

নানা ইসলামী টেরাকোটা, ফুল ও লতাপাতার কারুকার্য খোদাই করা রয়েছে মসজিদের দেওয়ালজুড়ে। সম্মুখভাগে আয়তকার টেরাকোটার কারুকার্যগুলো একটির সাথে অপরটির মিল নেই। দেয়ালে ব্যবহার করা ইটগুলো চিক্কন, রক্তবর্ণ ও বিভিন্নভাবে অলঙ্কৃত।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট, প্রস্থ ২৫ ফুট এবং একই সারিতে রয়েছে ৩টি গম্বুজ। গম্বুজের চার কোণায় রয়েছে চারটি মিনার। সামনে রয়েছে তিনটি দরজা। সদর দরজা ও মাঝের গম্বুজের সামনের দিকে দুইপাশে রয়েছে দুইটি ছোট মিনার। মসজিদের ভেতরের অংশে খোদাই করা ফুল, লতাপাতা, কুরআনের আয়াত সংবলিত ক্যালিগ্রাফি তুলির ছোঁয়ায় সুসজ্জিত। এসব খোদাই করা কারুকার্য বিভিন্ন রঙে বিভিন্ন ভাবে সাজানো। মসজিদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইবাদতে মশগুল ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটায়। এ ধরনের কারুকার্য খচিত নকশা ইরানের মসজিদ ও প্রাচীন অট্টালিকার মাঝে বিদ্যমান রয়েছে।

মসজিদের সামনে একটি খোলা জায়গা রয়েছে। খোলা জায়গার এক পাশে রয়েছে সুসজ্জিত পাকা তোরণ। তোরণের উভয় পাশে আকর্ষণীয় নকশা ও খাঁজ করা স্তম্ভ। স্তম্ভের মাঝে চ্যাপ্টা গম্বুজ তোরণকে অনিন্দ্য রূপ দিয়েছে। সুসজ্জিত গম্বুজের উপরে ক্ষুদ্র আকৃতির চূড়া তোরণটিকে ১৬ কলা রূপ দিয়েছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে একটি নূরানী মাদ্রাসা। সামনের দিকে রয়েছে প্রাচীন আমলের একটি অব্যবহৃত কূপ। এছাড়া তোরণের সামনের দিকে রয়েছে একটি পুকুর। যেখানে দুরন্তপনা শিশু-কিশোররাসহ এলাকাবাসী স্নান করতে পারেন।

মসজিদের নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানা ইতিহাস। স্থানীয়রা মনে করেন, মালিক উদ্দিন নামে মির্জাপুর গ্রামেরই এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মালিক উদ্দিন মির্জাপুর গ্রামও প্রতিষ্ঠা করেন। দোস্ত মোহাম্মদ নামে জনৈক ব্যক্তি মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা অনুযায়ী, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে (১৬৫৬ সাল) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণ সম্পর্কে পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে।

ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের। কেউ মনে করেন, মুঘল শাহজাদা আজমের সময়কালে (১৬৭৯ সাল) নির্মিত ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের মসজিদের সাথে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নির্মাণ শৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। সেই সময়েই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

এলাকাবাসীরা জানান, মসজিদটি নির্মাণের দীর্ঘ প্রায় ৩৬৫ বছর পার হলেও কোথাও উল্লেখযোগ্য ত্রুটি চোখে পড়েনি। একসময় প্রবল ভূমিকম্পে মসজিদটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। তখন মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মালিক উদ্দীন মসজিদটি সংস্কারের জন্য ইরান থেকে কারিগর নিয়ে আসেন। তখন থেকে আর সংস্কার হয়নি। বর্তমানে মসজিদটির দেওয়ালে ও গম্বুজে কিছুটা ফাটল ধরেছে। এছাড়া ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারাও অল্প অল্প খসে পড়েছে।

মির্জাপুর শাহী মসজিদের নিপুণ কারুকার্য, সৌন্দর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভ্রমণপিপাশুদের মনের তৃষ্ণা মেটায়। তবে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির স্থানীয় জনগণের দেখাশোনার পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টিপাত জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আরও দর্শনীয় হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুক এটাই কামনা সবার।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়