২১০ ধরনের চা বানিয়ে আশিকের বাজিমাত
মাইনুদ্দীন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন দ্বিতীয় গেটে আশিক মিয়ার চায়ের দোকান। দোকানের ভেতর ঝুলছে ২১০ ধরনের চায়ের নাম ও দাম লেখা সাইনবোর্ড। প্রতিদিন বাহারি চায়ের স্বাদ নিতে আসেন শত শত মানুষ।
দোকানে প্রতিদিনই সব ধরনের চা তৈরি করেন বলে জানালেন আশিক। তার চায়ের সুখ্যাতি ছড়িয়েছে আশেপাশের জেলাগুলোতেও। তাই এলাকার বাইরের মানুষও তার চায়ের স্বাদ নিতে আসছেন। ধরনভেদে প্রতিকাপ চায়ের দাম ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
সাইনবোর্ডে সর্বোচ্চ দামের তালিকায় রয়েছে একটি কফির নাম-চকলেট ক্যাপাসিনো কফি, দাম ১০০টাকা। তার পরের সর্বোচ্চ আরেকটি কফির নাম- ক্যাপাসিনো কফি, দাম ৮০ টাকা। তালিকায় এ দু’টি কফিই রয়েছে, বাকি সবই চা। সর্বোচ্চ দামের চায়ের নাম- শাহী মালাই, দাম ৬০ টাকা।
ফেসবুকে আশিক মিয়ার চায়ের সুখ্যাতির পোস্ট দেখেন পাশের জেলা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চানদুলা গ্রামের জুয়েল মিয়া। তিনি ৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় আশিক মিয়ার ২১০ রকমের চা বানানো দেখতে ও খেতে আসেন। জুয়েল মিয়া ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ৩০ টাকা দিয়ে 'বাদামি' নামের চা খেয়ে অনেক খুশি।
এমনিভাবে নরসিংদীর মরজাল থেকে এসেছেন মিঠু মিয়া ও রবিন মিয়া নামের দুজন বন্ধু তারা আশিক মিয়ার ৬০ টাকা দামের 'শাহী মালাই' নামের চা খেতে পেরে অনেক খুশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুরের সাকিব রাকিব, কবির মোবারক দেলোয়ার হোসেন, ইব্রাহিম মিয়া- এরা ৬০ টাকা দিয়ে 'শাহি মালাই' চা কিনে খাচ্ছেন। পৌরশহরের মেড্ডা এলাকার তানভীর, রুবেল, শাহীদুল ইসলাম-খাচ্ছেন ৩০ টাকা করে 'বাদামী' চা। পাশের উপজেলা বিজয়নগর চান্দুরা ইউনিয়নের ইব্রাহীমপুর থেকে জহিরুল ইসলাম ও আলমগীর মিয়া লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পছন্দের চা অর্ডার দেওয়ার জন্য।
শুক্রবার রাত ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত আশিকের চায়ের দোকানে গেলে দেখা যায় শতাধিক মানুষের আনাগোনা ও ভিড় লেগেই আছে।
আলাপকালে আশিক মিয়া জানান, সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে তার বেচাকেনা। ইরানী, দিল্লি, তামিল নাড়ু, কলকাতা থেকে শুরু করে দুবাই, সৌদি আরবের বিখ্যাত চা পাওয়া যায় এখানে। আশিক ইউটিউব দেখে চা বানানো শিখেছেন।
আশিক জানান, এক দিনে ৭শ থেকে ৯শ কাপ চা বিক্রি হয়। চা শুক্রবার ও শনিবার বেশি বিক্রি হয়। কারণ, ছুটির দিনে মানুষ বেশি আসে। সব ধরনের চা'ই বিক্রি হয় তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাদামী চা ও শাহী মালাই চা।
একদিনে আট থেকে দশ হাজার টাকার চা বিক্রি হয় বলেও জানান আশিক।
আশিক মিয়া আরো জানান, আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে মানুষ চা খেতে বিভিন্ন জেলা থেকে আমার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আসেন এবং চা খেয়ে প্রশংসা করেন। আগে চা বিক্রি করি শুনতে খারাপ লাগতো কিন্তু এখন এত মানুষের ভালবাসা পাইতাছি এখন আর চা বিক্রি করি খারাপ লাগেনা।
বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে চা দোকান দিয়ে বসেন আশিক। আশিক অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর পড়তে পারেননি পরিবারের হাল ধরার কারণে। আশিক ছোট থেকেই চা পছন্দ করতেন। চায়ের প্রতি আগ্রহ থেকেই দেশ বিদেশের নানা রেসিপি জোগাড় করেন আশিক। এখন সেই চায়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ প্রকারেরও বেশি।
আশিক মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মৃত আলি হায়দার মিয়ার ছেলে। স্ত্রী, একটি মেয়ে, পাঁচ বোন ও দুই ভাই নিয়ে তাদের পরিবার। চায়ের আয়ে ভালই দিন কাটছে তাদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া/টিপু