রংপুর বিভাগে ১৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান নিয়ে শঙ্কা
রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আগামীকাল রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন শিক্ষকরা। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছে বিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে পা পড়বে শিক্ষার্থীদের। তবে কয়েক দফার বন্যায় চলাঞ্চলসহ বিভাগের ১৯১টি ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের পাঠদান ও শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে স্তরে ১২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৩ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২ হাজার ৯৬৮টি বিদ্যালয়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। মহামারী করোনার কারণে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে, আবার অনেক শিক্ষার্থী অভিভাবককে সাহায্য করার জন্য কর্মসংস্থানের পথ বেছে নেওয়ায় উপস্থিতির হার কতটা হবে তা নিযে শঙ্কা প্রকাশ করেছে রংপুরের সচেতন মহল।
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে আসায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি।
রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছি। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে ক্লাস পরিচালিত হয়, সেই বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
রংপুর কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাহিদ হাসান বাবু বলেন, ‘দেড় বছর পর স্কুল খুলছে, এতে আমার মেয়ে খুব খুশি। দীর্ঘদিন ধরে বাসায় প্রাইভেট পড়িয়েও যেন তার মনে অতৃপ্তি রয়ে গেছে, সেটি কাটিয়ে এবার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ফিরে পাবে। এতে আমিও খুব খুশি।’
রংপুর অঞ্চলে দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাথমিক স্তরের এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিশ্চিতে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, পাঠদান নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। স্কুলগুলোর শ্রেণিকক্ষ পাঠদান উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজও চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলাঞ্চলে এখনও বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠ ও মাঠের বাইরে পানি জমে আছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে পানি নেমে গেলেও কাদা রয়েছে। কোথাও কোথাও বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে বিদ্যালয়ের আসবাব থেকে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বসার চেয়ার ও টেবিল নষ্ট হয়েছে। সেগুলো মেরামতের কাজ চলছে।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলছে, এ বছর বিভাগের পাঁচ জেলায় বন্যা, অতিবৃষ্টি ও ঝড়ে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় ১০২টি, কুড়িগ্রামে ৭৩টি, নীলফামারীতে ১০টি, লালমনিরহাটে ৫টি এবং রংপুরে একটি রয়েছে।
এসব বিদ্যালয় মাঠে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এসব বিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছেন। নদীগর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে, নয়তো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বন্যা কবলিত গাইবান্ধায় ক্ষতির তালিকায় থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ১০২টি বিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে যেসব বিদ্যালয়ে পানি উঠেছিল তা নেমে গেছে। এখন সরকারি নির্দেশনা মেনে ধুয়ে মুছে সবকিছু পরিষ্কার করে পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। এখন ঘরবন্দি লাখো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তবে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বাইরে রাখলে সরকারের এই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রংপুর অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে। যে কয়টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, সেগুলো পাশের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আপাতত চালু হবে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মিললে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
আমিরুল/বকুল