প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা অক্ষত রেখে দিয়েছেন তিনি
তারেকুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল আলী (৫৫) পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ৩ হাজার টাকা। আর সেই টাকা তিনি কাফনের কাপড় কেনার জন্য অক্ষত রেখে দিয়েছেন।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তিনি এই ৩ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। এখনো তার কাছে সেভাবেই টাকাটা রক্ষিত রয়েছে।
আব্দুল আলী আগাগোড়া বঙ্গবন্ধুর জন্য পাগল একজন মানুষ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মীও তিনি। নিজের প্রতি খেয়াল না থাকলেও দলের জন্য ঠিকই খেটে যান সবসময়। তিনি মনে করেন, সেই ত্যাগ ও কর্মের ফল হিসেবেই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার।
বাবা মৃত ছিদ্দিক আহমদ এমন কিছুই রেখে যাননি। একক উপার্জনের বড় সংসারে নিত্যদিন অভাব অনটন লেগে থাকে। জীবিকা নির্বাহের উপায় নলকূপের মিস্ত্রিগিরি। টানাপোড়নের সংসারে দিনে এনে দিনে খেলেও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকাগুলো যেমনি পেয়েছেন ঠিক তেমনি শেষ নিঃশ্বাসের সম্বল হিসেবে রেখে দিয়েছেন আব্দুল আলী।
এক ছেলে এক মেয়ে কলেজে পড়ালেখা করে। সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাত-দিন। তার সন্তানরাও মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু একজনের উপার্জনে লেখাপড়ার খরচ ও সংসারের খরচ চালিয়ে নিতে পারছেন না আব্দুল আলী। দুমুঠো ডাল-ভাত জোগাড় করতে তাকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আব্দুল আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে আওয়ামী লীগ করি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া টাকায় কাফনের কাপড় গায়ে জড়াতে চাই। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৩ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। অভাব অনটনের মাঝেও আমি সেই টাকা রেখে দিয়েছি যতন করে। আমার মরণ হলে এই টাকায় যেন কাফনের কাপড় কিনে আমার গায়ে জড়ানো হয়।’
কয়েক বছর আগে ঘরে আগুন লাগে আব্দুল আলীর। আগুনে শেষ সম্বল ঘরটি পুড়ে যায় তার। এরপর কোনো রকম ত্রিপল ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি একটি ঘরে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকেন তিনি।
অভাব অনটনের সংসার টেনে ঘরটি আর সংস্কার করা হয়নি। রোদ বৃষ্টি ঝড় বয়ে যায় তার উপর দিয়ে।
বাহারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালনকারী আবদুল আলী সারা জীবন খেটেছেন আওয়ামী লীগের জন্য। নিজের পেটে ভাত না থাকলেও দলের খবর নিয়েছেন সবসময়। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বিশেষ উপহারের ঘর পাননি এই বঙ্গবন্ধু ভক্ত।’
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘এই রকম কোনো খবর আমার কাছে এখনো আসেনি। তবে খবর নেওয়া হচ্ছে। অসহায় কোনো ব্যক্তি যদি কষ্ট পায় কিংবা আশ্রয়হীন অবস্থায় থাকে, তাহলে তার ব্যাপারে যথাযথ খোঁজ-খবর নিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
কক্সবাজার/টিপু