শতবর্ষী গাছ কেটে নেতা বললেন, ‘আমি সভাপতি, কার অনুমতি নেবো’
রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম
গাজীপুরের কালীগঞ্জে বোয়ালী উচ্চ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শত বছরের পুরনো দু’টি জাম গাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গণি ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পটুসহ জমিদাতা আরো ৪/৫ জন লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি ভূঁইয়া কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমান কমিটিতে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা।
মোফাজ্জল হোসেন পটু জানান, প্রায় শত বছরের পুরনো দুটি জাম গাছের মূল্য লাখ টাকার বেশি। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভাপতি তার একক ক্ষমতায় নামমাত্র মূল্যে গাছ দু’টি বিক্রি করেছেন। গাছ কাটার বিষয়ে আব্দুল গণি ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি আমার ক্ষমতায় গাছ কাটছি পারলে কেউ কিছু করুক। ইউএনও সাহেবও বিষয়টি জানেন।
বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা বেগম বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. মফিজ উদ্দিনের বরাত দিয়ে জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর দপ্তরি স্কুলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে যান। এ সময় তিনি দেখেন বিদ্যালয় ভবনের সামনে প্রায় শত বছরের পুরনো দু’টি জাম গাছ করাত ও কুঠাড় দিয়ে কেটে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে বিষয়টি আমাকে ফোনে অবগত করেন। আমি দপ্তরির কাছে ফোনে জানতে পেরে বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষষের সভাপতি আব্দুল গণি ভূঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি গাছ কাটার বিষয়টি জানেন বলে জানান।
বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রিপন বলেন, এই গাছ দুটি বোয়ালী উচ্চ বিদ্যালয়ের। আমি এ ব্যাপারে কোন কিছু জানি না। গাছ কে বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাছ কাটার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। এলাকায় এসে দেখি স-মিলের মালিক শফিক গাছ দুটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন এসে দেখি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে রোপণ করা দু’টি জাম গাছ কে বা কারা কেটে নিয়ে গেছে। তবে বিষয়টি তিনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তারকে অবগত করেছেন বলেও জানান তিনি।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানছুরা আক্তার বলেন, আমি বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার স্যারকে জানানো হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে নিয়মানুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের রেজুলেশন করে উপজেলা পর্যায়ের কমিটিকে অবগত করতে হয়। এরপর উপজেলা কমিটির সভা ডেকে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি এর কোনটিই করেননি।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি ভূঁইয়াকে এ কথা বললে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি কার কাছে থেকে অনুমতি নিবো? বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে তাই গাছ কেটে ফেলেছি।
গাজীপুর/রফিক/এমএম