লোকসানের শঙ্কায় আলু চাষিরা
দাম কম হওয়ায় আলু নিয়ে এবার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের সঙ্গে বেকায়দায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও।
বর্তমান বাজারে ৬০ কেজির এক বস্তা আলুতে লোকসান হচ্ছে চার থেকে পাঁচ’শ টাকা। ফলে কমে গেছে আলুর বেচা-কেনা। দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। এতে হিমাগারগুলোতে আলুর স্তর জমছে। এমন পরিস্থিতিতে মৌসুম শেষে বিপুল আলু অবিক্রিত থাকার আশঙ্কা করছেন সংশ্নিষ্টরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর দাম বেশি পেয়ে এবার কৃষকের পাশাপাশি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন ব্যবসায়ীরা। হিমাগার ভাড়াসহ ৬০ কেজির প্রতিবস্তা আস্টেরিক জাতের আলুতে এবার খরচ পড়েছে এক হাজার টাকা আর দেশি পাকরি জাতের আলুতে খরচ পড়েছে ১২শ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতি বস্তা আস্টেরিক আলু ৫শ এবং পাকরি আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬শ টাকায়।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, আলু রাখার সময় হিমাগারের মালিকের থেকে ঋণ নিয়েছিলেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এখন আলু বিক্রি করতে না পেরে হিমাগার মালিক ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা নিয়েও বেকায়দায় পড়েছেন তারা। দাম কমের পাশাপাশি বাজারে চাহিদা না থাকায় হিমাগারে মজুদের মাত্র ২০ ভাগ আলু বিক্রি হয়েছে। ৮০ ভাগ আলু এখনো মজুদ রয়েছে জেলার হিমাগারগুলোতে। অথচ হিমাগার খালি করার সময়সীমা রয়েছে আগামী ১৫ নভেম্বর। এ অবস্থায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে চরম লোকসানে পড়েছেন তারা। গত বছর দাম বেশি হওয়ায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও লোকসান ঠেকাতে কোনো নজরদারি নেই সরকারের এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে এবার ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমি থেকে আলু উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন। যার মধ্যে জেলার ১৭ হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
মোলামগাড়ী বাজারের আলু ব্যবসায়ী বুলবুল হোসেন জানান, মৌসুমের শুরুতে ১১ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। বাজারের বর্তমান অবস্থায় ওই আলু বিক্রির পরও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আরও ৩০ লাখ টাকা পকেট থেকে দিতে হবে। সে কারণে তিনি এক বস্তা আলুও বিক্রি করেননি।
একই ধরনের বক্তব্য দেন আরেক ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান। তিনি জানান, হিমাগার থেকে ২২ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছেন তারা। এটি এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সালামিন ফুডসের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আলুর দাম কম হওয়ায় হিমাগার থেকে নেওয়া ঋণের টাকাও দিচ্ছেন না কেউ।’
কালাইয়ের মোলামগাড়ী নর্থপোল কোল্ডস্টোরেজের মহাব্যবস্থাপক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আলু নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। কারণটা হচ্ছে গত বছর বা অন্যান্য বছর এই সময়ে সংরক্ষণের আলু পরিমাণ যা থাকে তার প্রায় ৮০ ভাগ চলে যায়। বর্তমানে ২০ ভাগ আলু হিমাগার থেকে যায়নি। দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের ভয়ে আলু তুলছেন না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।’
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জয়পুরহাটে আলু উৎপাদন লাভজনক করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বাজারে আলুর চাহিদা বাড়ানোর দাবি এলাকাবাসির।
জয়পুরহাট/বুলাকী