ঢাকা     বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২২ ১৪৩১

স্কুলের খেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হলো গাছ

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১  
স্কুলের খেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হলো গাছ

দীর্ঘ করোনার পর খুলেছে স্কুল। এখন আবার শিক্ষার্থীদের পদচারনায় ও খেলাধুলায় মুখোরিত হয়ে উঠবে স্কুল মাঠ। কিন্তু স্কুলের খেলার মাঠে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সারি সারি গাছ। আবার গাছ রক্ষায় মাঠটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে বেড়া।

এমনই ঘটনা ঘঠেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারছে না। এ ঘটনায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ দখলের প্রতিবাদে ও দখলমুক্ত করার দাবিতে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেছে তারা। একই সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাঠ উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে আগের মতো কমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে পারে।

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে স্কুলটি লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় সুনাম ধরে রেখেছে। বর্তমানে স্কুল প্রায় সাড়ে ৮শ শিক্ষার্থী রয়েছে।

আরো পড়ুন:

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার বাড়ৈ জানান, তৃতীয় দফা স্কুলের মাঠ বালু ভরাট করে উঁচু করার সময় স্থানীয় গোপালপুর গ্রামের উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠের জমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি তুলে বাধা দেন। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ‌্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় বালু ভরাট কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার দিন দেখা যায়, কে বা কারা স্কুলের মাঠে অস্থায়ীভাবে বেড়া দিয়ে মেহগনি ও কলাগাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় উপেন্দ্রনাথ টিকাদার রাতের আঁধারে লোকজন নিয়ে স্কুলের মাঠে গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন।

এ মাঠে বিভিন্ন সময় ফুটবলসহ গ্রীষ্মকালীন খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠ স্কুলের নামে রের্কডীয় সম্পত্তি। স্কুল থেকে নিয়মিত এই জমির খাজনা পরিশোধ করা হয়। মাঠ দখল করে গাছ লাগানোয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছি। কিন্তু এখনও মাঠটি উদ্ধার হয়নি। তাই মাঠ উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) দেশবন্ধু বিশ্বাস জানান, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি এই স্কুলে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই থেকে স্কুলের মাঠটি তারা ব্যবহার করে আসছেন। হঠাৎ উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠ তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন। তিনি রাতে আঁধারে মাঠটি বেড়া দিয়ে ঘিরে গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলায় মারাত্নক ব্যাঘাত ঘটছে।

স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মিষ্টি বাইন বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস ঘরবন্দি ছিলাম। প্রথম দিন স্কুলে এসে দেখলাম মাঠ দখল হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম অনেকদিন পর স্কুলে এসে বান্ধবীদের সঙ্গে মাঠে ঘুরবো আর খেলাধুলা করবো। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না।’

একই শ্রেণির জিতু মণ্ডল, শোভন সিকদার, নয়ন কবিরাজ মাঠটি অবমুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘খেলাধুলা তো পড়াশোনার অংশ। আর খেলাধুলা করলে মন ও শরীর ভাল থাকে। আর পড়াশোনায় মনোযোগ আসে। আমাদের দাবি দ্রুত মাঠটিতে আমরা আগের মতো শরীর চর্চা ও খেলাধুলা করতে পারি সরকার তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

অভিযুক্ত উপেন্দ্রনাথ টিকাদার বলেছেন, ‘মাঠটি আমার বাবা-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি। স্কুলের নামে কিভাবে রেকর্ড হলো তা আমার জানা নাই। আমি মামলা করেছি কিন্তু আমার পক্ষে রায় আসেনি। আগে যখন বালু ভরাট করেছে তখন আমার পক্ষে লোকজন ছিলো না তাই বাঁধা দিতে পারিনি। এখনও আমার পিছনে লোকজন আছে তাই আমি বাঁধা দিয়েছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছিলো বিষয়টি সমাধান করে দিবে কিন্তু বালু ভরাট করা হলেও কোন সমাধান না দেওয়ায় আমি বেড়া দিয়ে গাছ লাগিয়ে দিয়েছি।’

স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুষেন সেন বলেছেন, ‘দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর ধরে এই মাঠটি স্কুল ব্যবহার করছে। এতো দিন কেউ বলেনি এটি তাদের। এখন বালু ভরাট করতে গিয়ে দেখলাম উপেন্দ্রনাথ টিকাদার মাঠটি তার দাবি করে বালু ভরাটে বাঁধে দেয়। আমি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ‌্যমান্য ব্যক্তিদের আলাপ আলোচনা করেছি। বিষয়টি বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ জালাল বলেন, ‘বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাদের জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানাতে বলেছি। আশা করি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার বিষয়টি তদন্তে জন্য সরেজমিনে সহকারী কমিশনার ভূমি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জমির দাবিদারের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাদল/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়