ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ

গাইবান্ধা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৮:০৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ

আল্লার উপর ভরসা করেই চলছে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর ১৫৬ টি চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। গ্রাম পর্যায়ে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা শুধুমাত্র খাতাপত্রেই আছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গোবিন্দগঞ্জে ৬৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৬৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী, সাঘাটায় ৪২ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৪২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ফুলছড়িতে ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, সুন্দরগঞ্জে ৬১টি ক্লিনিকে ৬১জন স্বাস্থ্যকর্মী, সাদুল্লাপুরে ২৯টিতে ২৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী, পলাশবাড়িতে ৩৩টি কেন্দ্রে ৩৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী, গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৫২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫২ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট জেলায় ৩১১ জন স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন সরকারি খাতাপত্রে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

মোল্লারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, ‘মাস এমনকি বছরেও দেখা মেলে না স্বাস্থ্য কর্মীদের। আর চিকিৎসা বা ওষুধতো দূরের কথা। তাই আল্লাহর উপর ভর করে চলে মানুষের জীবন।’

আরো পড়ুন:

কঞ্চিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির বলেন, ‘আমরা বাস করি বালুচরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাস করি ঝুঁকি নিয়ে। স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ বিধিতেই আছে যেখানে চাকরি সেখানেই তাকে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগে এক রকম, পরে হয়ে যান অন্যরকম। সে কারণে চরাঞ্চল নির্ভর করে স্বাস্থ্যকর্মীর মর্জির ওপর।’

মালিবাড়ি গ্রামের সাজু মিয়া বলেন, ‘ক্লিনিকের ভবন আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা ইচ্ছেমতো আসেন আর নিজের ইচ্ছেয় তালা লাগান। আবার কেউ আসেন দরোজা খুলে খোশ গল্পে মশগুল হয়ে যান। ওষুধ বলতে শুধু নাই আর নাই । আর নদীর দীর্ঘ চরাঞ্চলে কোন ক্লিনিকের অস্থিত্ব খুজে পাওয়া যাবেনা। কাগজে কলমে স্বাস্থ্যকর্মীরা চরে থাকার কথা থাকলেও তারা থাকেন না । সে কারণে চরবাসীর ভাগ্য নির্ভর করে আল্লার ওপর ভরসা করে।’

গাইবান্ধা থেকে সোজা পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর মাঝখানে চর গুপ্তমনি। গ্রাম একটি কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে তা দুই ইউনিয়ন কঞ্চিপাড়া ও ফজলুপুরে ভাগ হয়ে গেছে। ৯০ সালের বন্যার পর এই চর নদী থেকে মাথা তুলে দাঁড়ায়। চরটি বাসযোগ্য হওয়ায় বিভিন্ন চর থেকে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নেয়।  

এই চরটিতে দুই থেকে আড়াই শ পরিবারের বাস। এখানে প্রাইমারি স্কুল আছে দুটি। কিন্তু শিক্ষার্থীর অভাব প্রকট। নেই স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা। অসুস্থ্য হলে আল্লাহ ছাড়া গতি নাই। আর খুব বেশি হলে বালুচর, নৌকায় করে নদী পার হয়ে যেতে হয় গাইবান্ধায়। ততোক্ষণে হয়তো মারা যান রোগী।  

চর গুপ্তমনির আড়াই শ পরিবারের দিনরাত কাটে আতঙ্কে। অসুখ বিশুখ হলে ছুটতে হয় বালুচর দিয়ে নৌকায়। তারপর ২০ কিলোমিটার দুরে গাইবান্ধা হাসপাতাল। এই চরেও দেখা মেলেনা ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর।

এই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আবু তালেব। তিনি বলেন ‘হামরা আল্লার দয়ায় বাঁচি আছি। এখানে আনজু মনোয়ারা রিক্তা নামের একজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন বলে শুনেছি। কিন্তু কখন আসেন আর কোথায় বসেন বলতে পারিনা।’

এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চরে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথায় থাকবে। তাদের নিরাপত্তা দিবে কে?

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন আ,শ ম আকতারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত ক্লিনিকে যান। দুই একজনের কথা আলাদা। কিন্তু সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লিনিক খুলে সেবা দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

সিদ্দিক/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়