বাল্যবিয়ের ঝাপটায়ও নিভে যাবে না ওদের স্বপ্ন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
বিদ্যালয়ের ২০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হলেও ১৫ জন ছাত্রী নিয়মিত ক্লাস করে
লোপা আক্তার। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শেখ ফজিলাতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি পাশের সংগ্রামপুর গ্রামে। বাবা সেলিম মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা শাহিনা আক্তার গৃহিণী।
লোপারা দুই বোন। ছোট বোন সোনালী স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। লোপার ইচ্ছা ছিলো এসএসসি পাস করে নার্সিং পড়ে মানবসেবায় নিয়োজিত হওয়ার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার বিয়ে হয়ে যায়। বালিকা বধূ সেজে যেতে হয়েছে স্বামীর সংসারে। তারপরও ক্লাস শুরু হওয়ার পর তিনি নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। লোপার ইচ্ছে বাল্যবিয়ের ঝাপটায় তার স্বপ্ন নিভে যেতে দেবে না।
শুধু লোপা আক্তার নয়, একই সুরে কথা বললো ওই বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী মাফিয়া, রেমি খানম, সুমি আক্তার মৌটুসি, মোহনা আক্তার, মিতু আক্তার, রিয়া আক্তার ও দশম শ্রেণির ছাত্রী মোর্শেদা খাতুন, সানিয়া আক্তার। বিয়ে হলেও তারা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়। দাঁড়াতে চায় নিজের পায়ে। পরিবার ও দেশের জন্য করতে চায় ভালো কিছু।
লোপা আক্তার বলে, ‘এই বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। দাদা-চাচারাও রাজি ছিলো না। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে মা-বাবা বিয়ে দিয়েছেন। তাদের চাপের মুখে আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। তবে বিয়ের কারণে আমার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেবো না।’ প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে ও গ্রামে মাঝে মাঝে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে আলোচনার ব্যবস্থা করা হলে অনেকেই এর থেকে মুক্তি পেতো বলে মনে করে লোপা আক্তার।
মৌটুসি আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সামাজিক পেক্ষাপট আর মা-বাবার কারণেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে। আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই। এ বিষয়ে অবশ্য স্বামীর সংসার থেকে এখনও বাঁধা আসেনি। তবে প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বিয়ের পর অনেক মেয়েরই লেখাপড়া বন্ধ করে দেন তাদের পরিবার। নানা বাধার কারণে তাদের বিদ্যালয়ে ফেরানো সম্ভব হয় না। বিয়ের পরও যারা বিদ্যালয়ে এসেছে আমরা তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবো।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিউটি বেগম বলেন, ‘করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের ২০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হলেও অন্তত ১৫ জন ছাত্রী নিয়মিত ক্লাস করে। বিয়ের পরও তারা লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। যা নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের মনোবল অটুট রাখতে সহযোগিতা করবেন। বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি দূর করতে সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন।’
কাওছার আহমেদ/ইভা