ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

রায়হান হত্যার বছর পূর্ণ, স্তম্ভিত মা

নূর আহমদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ১০ অক্টোবর ২০২১  
রায়হান হত্যার বছর পূর্ণ, স্তম্ভিত মা

নিহত রায়হান ও মা সালমা বেগম

সিলেটের বহুল আলোচিত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামের তরুণের নিহতের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। এরইমধ্যে আলোচিত এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। 

তবে কারাগারে থেকেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত পুলিশের (বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া। সে নিহত রায়হানের মা, বউ ও সন্তানের দায়িত্ব নিতে চায়। আকবরের এমন প্রস্তাবে স্তম্ভিত রায়হানের মা। তিনি বলেছেন একজন খুনি এতো বড় স্পর্ধা পায় কোথায়?

রায়হানের মা সালমা বেগম জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলার তদন্তকালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেকে নেওয়া হয় তাকে ও রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি ও তার চাচা হাবিবুল্লাহকে। এসময় রায়হানের মা ও তার স্ত্রীকে সামনে না নিলেও তার চাচার মুখোমুখি করা হয় আকবর ও অপর আসামিদের। তখন পায়ে ধরে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা প্রার্থণা করে এসআই আকবর ও অভিযুক্ত আশেকে এলাহীসহ অন্যন্যরা। অনেকক্ষণ পায়ে ধরে বসেছিলো তারা।

সালমা বেগম আরো জানান, এসআই আকবরের মা-বাবা সিলেটে এসে তাদের এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করে আপসের প্রস্তাব দেন। তিনি তখন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন। 

সালমা বেগম বলেন ‘কোন খুনির সাথে আপস নয়। এরপর তার এক সহকর্মী পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে রায়হানের স্ত্রীর ভরণপোষনের দায়িত্ব নিতে চায়। সাথে মা ও সন্তানেরও দায়িত্ব নিবে সে। তবুও আমি যেন ক্ষমা করে দেই এবং মামলাটি আপস করি।’ 

সালমা বেগম বলেন, খুনিদের সাথে আপস করলে ভবিষ্যতে এদের হাতে আরো অনেক রায়হানের মৃত্যু ঘটবে।

সালমা বেগমের প্রশ্ন আকবর যদি দোষি না হয় তাহলে ক্ষমা কেন চাইবে, কেন তার দায়িত্ব, রায়হানের বউ ও সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইবে। রায়হানের স্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলার এতা বড় স্পর্ধা পায় কোথায় আকবর।

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর রাতে সিলেট নগরীর আখাললিয়া নেহারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে দাবিকৃত চাঁদা দেয়ার রাতভর নির্যাতন করেন তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবরসহ তার সহযোগীরা। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে রায়হানের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পুলিশ রায়হানের মৃত্যু গণপিটুনিতে হয়েছে মর্মে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগও গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতায় মূল রহস্য উদ্ঘাটন হয়। এ ঘটনায় নিহত রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে কতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্তে এসআই আকবরসহ পুলিশের ৫ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের আসামি করা হয়।  

অন্যদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যায় মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া। পরে ওই বছরেরই ৯ নভেম্বর সকালে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এসআই আকবরকে। এই মামলায় আকবরসহ ৫ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। পিবিআই দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশের ৫ সদস্যসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন।

রায়হান হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজল আহমদ চৌধুরী জানান, আদালত পিবিআই'র দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। এখন বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি আশাবাদী বাদী পক্ষ ন্যায় বিচার পাবেন।

সিলেট/নূর/টিপু


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়