ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩১

শীত আছে খেজুর রস নেই

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২৯ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১২:৩৮, ২৯ অক্টোবর ২০২১

আগে শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেজুর রসের স্বাদ উপভোগ করতেন হবিগঞ্জবাসী। তবে এখন আর সেদিন নেই। অনেকটাই পাল্টে গেছে চিত্র। এখন জেলার কোনো কোনো এলাকায় খেজুর গাছের অস্তিত্বই নেই। কোথাও অল্পস্বল্প গাছ রয়েছে তবে তাতে আর আগের মতো রস মেলে না। তাই আগের মতো নিয়ম মেনে শীত এলেও রসের স্বাদ পান না জেলাবাসী।

বর্তমানে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট-শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক, শাকির মোহাম্মদ-চুনারুঘাট সড়ক, শায়েস্তাগঞ্জ-দেউন্দিসহ কয়েকটি সড়কের দুই পাশে কিছু খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশের খেজুর গাছ বিলীনের অন্যতম কারণ বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ।  অন্যদিকে রাস্তার পাশে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর বাসা-বাড়ি গড়ে উঠছে যা খেজুর গাছ নিধনের অন্যতম কারন।  আবার এক শ্রেণির লোক খেজুর গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন।

আরো পড়ুন:

পরিবেশ প্রেমিদের দাবি, খেজুর গাছ রক্ষায় সবারই এগিয়ে আসা জরুরি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যের সুস্বাদু খেজুর রস। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষ গাছ ছিলানো (গাছ কাটা) নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।  কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারেন, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন।  এখন তা নেই বললেই চলে।

তিনি আরো বলেন, জ্বালানি কাজে নির্বিচারে ব্যবহার করায় খেজুর গাছের সংকট দেখা দেয়। ফলে এ অঞ্চলে খেজুর রস ও গুড় আজ দুষ্পাপ্য হয়ে পড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন।  ৮ থেকে ১০ বছর আগেও এ অবস্থাটি দেখতে পাওয়া যেতো, এখন সে দৃশ্যটি তেমন আর চোখে পড়ে না। খেজুর গাছের সংকট দেখা দেওয়ায় আগের মতো আর রস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শীত মৌসুমে খেজুর রসের তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েসসহ সুস্বাদু নবান্নের খাদ্যসামগ্রী দিয়ে খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

চুনারুঘাট উপজেলার গোড়ামী গ্রামের তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা সমাজসেবক তারেক তালুকদার বলেন, এক সময় আমাদের বাড়িতে অনেক খেজুর গাছ ছিল। আধুনিকতার সঙ্গে খেজুর গাছ বিলীন হওয়ার পথে। বর্তমানে কয়েকটি গাছ আছে। শীত আসলে গাছি রুমনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে এ গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। আর খেজুর রস ছাড়া শীতের আমেজ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নবান্নের সেরা উপহার।  খেজুর রস দিয়ে অল্প সময়ে তৈরি করা হতো পাটালি গুড়, ও বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় নানা রকমের মজার মজার খাবার । সময়ের বিবর্তনে সে ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

চুনারুঘাট উপজেলার শানখলার বাসিন্দা গাছি রুমন মিয়া বলেন, ‘পূর্ব পুরুষরা গাছ প্রক্রিয়াজাত করে রস সংগ্রহ করতেন। তাদের ন্যায় আমিও প্রায় ১০ বছর ধরে এ কাজে যুক্ত আছি। তবে গ্রামে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। নেশার বসে সন্ধান চালিয়ে বের করে গাছে প্রক্রিয়াজাত করে খেজুর রস সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘গাছের মালিককে সপ্তাহে তিন দিন রস দিয়ে বাকি চার দিন আমি নিয়ে বিক্রি করে যে টাকা পাই তাতে পরিশ্রমের মূল্য হয় না। মৌসুমি রসের স্বাদ পেতে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা ছাড়তে পারছি না। শীত বৃদ্ধির পেলে গাছ থেকে বেশি পরিমাণে রস সংগ্রহ করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘শীতের সকালে খেজুর রস খাওয়ার স্বাদই আলাদা। তাই এ খেজুর গাছ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’

মামুন/সুমি/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়