ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

পরিবহনের ভাড়া বাড়ায় খুলনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৮ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৯:২৯, ৮ নভেম্বর ২০২১
পরিবহনের ভাড়া বাড়ায় খুলনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া 

পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে খুলনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে ডিজেলের পূর্বমূল্য বহাল রেখে ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও নাগরিক নেতারা। খুলনা-ঢাকা রুটের ভাড়া ১২৫ টাকা ৪২ পয়সা বেড়েছে।

অপরদিকে, খুলনা অঞ্চলের রূটগুলোতে পরিবহনে চাঁদাবাজি ও পুলিশের হয়রানি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন মালিক সমিতির নেতারা।

এদিকে, ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর রোববার রাত থেকে খুলনা-ঢাকা রুটে দূর পাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়। তবে, সোমবার (০৮ নভেম্বর) সকাল থেকে খুলনার অভ্যন্তরীণ রূটগুলোতে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সূত্র জানান, খুলনা থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ প্রায় অর্ধশতাধিক রুটে বাস চলাচল করে। বাস চলাচলে বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে চাঁদা দিতে বড় অঙ্কের টাকা চলে যায়। ফলে পরিবহন সেক্টরের রুট খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খুলনা থেকে ঢাকা রুটে বাস প্রতি প্রায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি খুলনাতেই এক থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে মালিক সমিতির এক নেতা জানিয়েছেন।

সূত্র জানান, করোনার প্রভাবে দেড় বছর বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়ে এ সেক্টর। তাছাড়া সর্বশেষ ২০১৫ সালে নির্ধারিত গণপরিবহনের ভাড়া অনুযায়ী রুটের বিভিন্ন খরচ তুলে লাভের মুখ দেখা কষ্টকর বলে দাবি বাস মালিক সংগঠনের নেতাদের। তবে নামে-বেনামে নেয়া চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভাড়া বাড়িয়ে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা যায়।

খুলনা-ঢাকা রূটের ফাল্গুনী পরিবহনের পরিচালক কালাম ভুঁইয়া জানান, বিভিন্ন রুটে এক এক ধরণের চাঁদা রয়েছে। যা পরিবহন মালিকদের জন্য বাড়তি চাপ।

রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল হক লিপন জানান, ট্যাক্স-টোল বৃদ্ধিসহ তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ধর্মঘট পালন করা হয়। চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সমিতির পরিচালনা খরচ বাবদ ৪০ থেকে ৫০ টাকা নিই। যেখানে খুলনায় গাড়ি প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্তও নেওয়া হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির খুলনা জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গণশুনানি করে অথবা যাত্রীদের প্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া পুননির্ধারণ করা হলে যাত্রীদের জন্য কল্যাণকর হতো। এছাড়া সরকার ও বিআরটিএ সড়ক পথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে পরিবহন সেক্টরের সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদা বলেন, ‘পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সকল ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস। চরম বিপাকে পড়বে তারা।’

পরিবহনে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা এক ধরনের দুর্নীতি। চাঁদার টাকা পরোক্ষভাবে জনগণের পকেট থেকেই যাচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো জনগণের কল্যাণে কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই।’

খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান জানান, করোনায় দেড় বছর বসে থাকায় এই সেক্টর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরেও গাড়ির ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে অনেকের কাগজপত্র আপডেট না থাকায় রাস্তায় ট্রাফিকের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদার সমস্যাতো রয়েছেই। সরকারের উচিত ছিল বিভিন্নস্থানে জরিপ করে সমঝোতার মাধ্যমে ভাড়ার তালিকা তৈরি করা। এসব বিষয় সমাধানে আমরা দাবি করে আসছি। এজন্য আমরা ধর্মঘট করতে বাধ্য হয়েছি। তবে শুধু ভাড়া বৃদ্ধিই সমস্যার সমাধান নয় বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হবে, যেটা আমরা চাই না। ট্যাক্স-রেভিনিউতে ছাড়, পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও নামে-বেনামে চাঁদার টাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও জনগণের ওপর চাপ কমবে বলেও মত দেন তিনি।

খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস বলেন, ‘যেখানে ভারত সরকার তেলের দাম কমিয়েছে সেখানে আমাদের লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করোনাকালীন সুবিধা দিলেও মালিকদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। দেড় বছর বন্ধ থাকায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, আয় হয়নি তবুও রেভিনিউ-ট্যাক্স মাফ করেননি সরকার বরং খরচ আরও বেড়েছে। করোনায় সরকারই গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছে, তাহলে কেন রেভিনিউ দিতে হবে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি জানান, রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বিভিন্নস্থানে পুলিশ গাড়ি আটকাচ্ছে, ফেরি ভাড়া, টোল বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। তাছাড়া চাঁদাও দিতে হয় মোটা অংকের। খুলনা-ঢাকা রুটে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে কোনো কোনো সময় চাঁদার টাকা কমবেশি হয়।

এদিকে, খুলনা মহানগরী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার (০৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। এর আগে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে তিন দিন ধরে চলা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। রোববার রাতে নগরীর রয়েল মোড়ের বিভিন্ন কাউন্টারে যাত্রীদের বাসের জন্য অপেক্ষ করতে দেখা যায়। একই অবস্থা ছিল নতুন রাস্তা মোড় ও দৌলতপুরে। তবে আন্তঃজেলা বাস সোমবার সকাল থেকে বর্ধিত ভাড়ায় চলাচল শুরু হয়।

ঈগল পরিবহনের খুলনা জোন ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম খন্দকার দারা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকা উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে গেছে। রাতে মোট ৬টি কোচ ঢাকা উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রোববার রাতে যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। তবে, সোমবার সকাল থেকে কিলোমিটার প্রতি ৩৮ পয়সা বর্ধিত ভাড়ায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে পূর্বের খুলনা-ঢাকা রুটে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১২৫ টাকা ৪২ পয়সা বেড়ে গেছে।

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা জানান, বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসায় কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে আন্ত:নগর বাস ছেড়ে চলাচল শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তিন দিন ধরে ধর্মঘটের মুখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা এবং মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ৫ পয়সা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে ভাড়া পুননির্ধারণ করা হয়।

খুলনা/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়