কাউন্সিলর খুন: ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কে এই শাহ আলম
আবদুর রহমান, কুমিল্লা || রাইজিংবিডি.কম
বন্দুকযুদ্ধে নিহত শাহ আলম। ফাইল ফটো
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম (২৮) বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে কুমিল্লার গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন চানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শাহ আলমের বাড়ি নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর পূর্বপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত জানু মিয়ার ছেলে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহ আলম একজন পেশাদার অপরাধী ছিলেন। সে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তার সব অপকর্মের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কাউন্সিলর সোহেল।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শাহ আলমের বিরুদ্ধে হত্যাসহ অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ এরই মধ্যে ৮টি মামলার তথ্য পেয়েছে। বাকিগুলোর খোঁজ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় দশ বছর আগে আধিপত্য বিস্তারের জেরে শাহ আলমের বাবা জানু মিয়াকে এক ব্যক্তি গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর শাহ আলম ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। ২০১৫ সালে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে শাহ আলমের পায়ে গুলি লাগে। তিনি এক সময় জামায়াতের রাজনীতি করলেও সম্প্রতি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা বলেই পরিচয় দিতেন। যদিও দলে তার কোন পদ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, সম্প্রতি শাহ আলমের সঙ্গে কাউন্সিলর সোহেলের পরিচিতজনদের একটি বিষয় নিয়ে বিরোধ বাঁধে। পরবর্তীতে ওই বিষয় নিয়ে শাহ আলম ও সোহেলের অনুসারীদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেক আগেও এর জেরে দুই পক্ষের লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব কারণে সোহেলের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল শাহ আলম।
কি বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল জানতে চাইলে তারা বলেন, শাহ আলমের বন্ধু সাব্বিরের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এক নারীর। কিছুদিন আগে ওই নারীর সঙ্গে গভীর রাতে দেখা করতে যায় সাব্বির। তখন এলাকাবাসী তাকে চোর আখ্যা দিয়ে ধাওয়া করে। পরে শাহ আলম এসে তাকে রক্ষা করতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। পরবর্তীতে এই বিষয় নিয়েই সোহেলের পরিচিতজনদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন শাহ আলম।
স্থানীয়রা আরও জানান, শাহ আলমের ওই বন্ধু ও সহযোগী সাব্বিরও গত সোমবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। আর বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন শাহ আলম।
কাউন্সিলর সোহেলের ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন বলেন, সন্ত্রাসী শাহ আলমের মৃত্যুতে আমরা খুশি। এলাকার মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছে। কিন্তু আমরা চাই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কেউ রয়েছে কি না সেটা বের হোক।
তিনি আরও বলেন, শাহ আলম ও তার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা মাদক ব্যবসা আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সোহেল ভাই পরপর দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এতেই সন্ত্রাসীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম বলেন, শাহ আলম একজন পেশাদার অপরাধী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আরও বেশ কিছু মামলার কথাও আমরা শুনেছি। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, পুলিশের উপর হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা।
উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লা নগরের পাথুরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মো. সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় গত ২৩ নভেম্বর রাতে মো. সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এজাহারে নাম থাকা পাঁচজন ও সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধে এজাহারে নাম থাকা তিন আসামি মারা গেছেন। আরও তিন আসামির মধ্যে ২ নম্বর আসামি সোহেল প্রকাশ, ১০ নম্বর আসামি সায়মন ও ১১ নম্বর আসামি রনি পলাতক।
আরও পড়ুন
কুমিল্লায় কাউন্সিলর খুন: প্রধান আসামি শাহ আলম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
কেআই