ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৩ ১৪৩১

নাটোরে ৬১১ খামারে মহিষ পালন

এম এম আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ২০ ডিসেম্বর ২০২১  
নাটোরে ৬১১ খামারে মহিষ পালন

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মিষ্টি তৈরির উপাদানের কথা আসলেই যে নামগুলো আসে তা হল ক্রিম, ছানা আর ঘি। এগুলোর অধিকাংশই পাওয়া যায় মহিষের দুধ থেকে। পাশাপাশি মহিষের মাংসের কদর তো রয়েছেই। এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল গাড়ি দিয়ে টানার শক্তিশালী প্রাণীও মহিষ। এক সময় রাস্তায় বের হলেই দেখা মিলতো মহিষের টানা গাড়ি। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ওইসব গাড়ি খুব একটা চোখে না পড়লেও বেড়েছে মাংস আর মিষ্টির চাহিদা। এই চাহিদার বড় অংশ মেটাচ্ছে মহিষ খামারীরা। 

নাটোরে এখন মহিষের খামার ৬১১টি। ওই খামারগুলোতে কৃষকরা পালন করছে মহিষ।  

আরো পড়ুন:

নদী ও চর এলাকা ছাড়াও একসময় পরিত্যক্ত জমিতে মহিষ পালন করা হত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় কমেছে ওইসব চারণ ভূমি। ফলে এখন খামার করেই পালন করা হচ্ছে মহিষ। এতে মহিষের খাবার যোগাড়ে বাড়তি টাকা ব্যয় হলেও দুধসহ দুগ্ধজাত সামগ্রীর দামও বেড়েছে। ফলে মহিষের খামার এখন লাভজনক।

নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার গোলাম মোস্তফা বলেন, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়াসহ সকল উপজেলাতেই মহিষ পালন করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি মহিষ পালন করা হয় লালপুর উপজেলার বিভিন্ন চর আর পদ্মা নদীর পাড় সংলগ্ন গ্রামগুলোতে। 

তিনি বলেন, জেলায় মোট ৬১১টি মহিষের খামার রয়েছে। মোট মহিষের সংখ্যা ৭ হাজার ২শ ৪৮টি। এর মধ্যে লালপুর উপজেলায় সর্বোচ্চ খামার ৩শ ৮০টি। এই উপজেলায় পালন করা মোট মহিষের সংখ্যা ৫ হাজার ৫শ ৮টি। জেলায় পালিত মহিষের মধ্যে দেশীয় প্রজাতির বাইরে রয়েছে ভারতীয় মুরা (Murra) জাত।

সরেজমিনে গিয়ে লালপুর উপজেলার আড়ানী বাকনা চরে দেখা মেলে মহিষের খামার। স্থানীয় খামারীরা জানালেন, এই চরেই রয়েছে ১৫টি খামার। যেখানে পালন করা হচ্ছে প্রায় ৩শ টি মহিষ।

মহিষ খামারী শিমুল বলেন, তার খামারে রয়েছে ১০টি মহিষ। এর মধ্যে দুধ দিচ্ছে ৬টি। প্রতিদিন তিনি ৫-৭ লিটার দুধ পান। ওই দুধ ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বিক্রি করেন। দুধ থেকে ছানা তৈরি করার পর বিক্রি করে তিনি প্রতিদিন ১২শ থেকে ১৩শ টাকা পান। দুধের পাশাপাশি অনেকে মাংস বিক্রির জন্য মহিষ কিনে নিয়ে যায়। মহিষগুলো পালন করতে খরচ বাদে তার প্রতি বছর ২ লাখ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, মহিষ পালনের খরচ কমানো গেলে বা দুধ আরও বেশি হলে তাদের লাভ আরও বেশি হতো।

নাগশোষা এলাকার দুধ ক্রেতা পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ওই এলাকায় মোট ৪ জন ঘোষ রয়েছেন। প্রতিদিন স্থানীয় মহিষ খামারীদের কাছ থেকে দুধ কিনে তারা ক্রিম, ছানা ও ঘি তৈরি করে বিক্রি করেন। ক্রিম তৈরির মেশিন তাদের নিজেদের রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ১ কেজি মহিষের দুধে ১৫০ গ্রাম ক্রিম পেলে তার দাম পরিশোধ করেন ৭০ টাকা। ক্রিম ছাড়া দুধের পাতলা অংশ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তারা ছানা তৈরি করেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি ক্রিম তৈরি করেন। ১ কেজি ক্রিম থেকে ৪৫০ গ্রাম ঘি তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, জেলা ও জেলার বাইরে থেকে মিষ্টি দোকানিরা তাদের কাছ থেকে ছানা কিনে নিয়ে যায়। ওই ছানা দিয়ে রসগোল্লা, চমচম, কাঁচাগোল্লাসহ নানা মিষ্টি তৈরি হয়। এছাড়া ঘি ব্যবসায়ীরাও তাদের কাছ থেকে ক্রিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি ঘি তারা পাইকারি ৮শ, ক্রিম ৩শ ও প্রতি কেজি ছানা বিক্রি করে ১শ টাকায়। সারা বছর ব্যাবসা করে সংসার ভালোভাবেই চলে তাদের।  

নাটোর উত্তরা গণভবনের সামনের মিষ্টি বিক্রেতা শেফালী হোটেল ও মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম জানান, তারা ছানা দিয়ে রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম, সুইটচিপসসহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করেন। ওই ছানাগুলো তারা লালপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ঘোষদের কাছ থেকে কেনেন।

শহরের মাদ্রাসামোড় মাংস বাজারের ব্যাবসায়ী সেলিম বলেন, প্রতিদিন তারা একটি করে মহিষ জবাই করে মাংস বিক্রি করেন। খাসির মাংসের চেয়ে মহিষের মাংসের দাম কম। যারা গরুর মাংস অপছন্দ করেন তারা মহিষের মাংস কেনেন। প্রতি কেজি মাংস সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন একটি করে মহিষের মাংস বিক্রি করে খরচ বাদে তাদের ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হয়।

দিঘাপতিয়া ঘোষপাড়ার ঘি ব্যবসায়ী ভোলা বলেন, তারা মহিষের দুধের ক্রিম কিনে এনে বাড়িতে ঘি তৈরির পর ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে লাভ দিয়ে তাদের ৫-৬ সদস্যর সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, মহিষের জাত উন্নয়নের কাজ চলছে। ভারতীয় জাতের সাথে দেশীয় জাতের মিশ্রণে জাত উন্নয়ন করা গেলে দুধের পরিমাণ বাড়বে। এতে খামারীরা আরও লাভবান হবেন। পাশাপাশি নতুন নতুন খামারী তৈরি হবে। এতে মাংস, দুধ, ক্রিম, ছানা ও ঘি এর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত অংশ অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে। 

নাটোর/সুমি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়