ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৬ ১৪৩১

শেলের আঘাতে ৩৯ বছর খালি পায়ে 

মেহেরপুর সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ২২ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২১
শেলের আঘাতে ৩৯ বছর খালি পায়ে 

৩৯ বছর খালি পায়ে মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘোল বিক্রি করছেন রফিক মীর। পাঠকের কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক তার খালি পা নিয়ে। এর পেছনেও রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পরে বঞ্চনার ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পায়ে আঘাত পান রফিক মীর। এরপর আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তিনি। পাঁচ সন্তানের জনক রফিক মীর জানান যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১১ বছর। একদিন বাবা দাউদ মীর, বড় ভাই নূরুল মীর ও সেজ ভাই হাশেম মীরের সঙ্গে তিনিও মাঠে ধান কাটতে যান। হঠাৎ একটি শেল ধান ক্ষেতে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় নূরুল মীর ও হাশেম মীর মারাত্মক জখম হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তারা দুজনই মারা যান। দাউদ মীর রাজশাহী হাসপাতালে ৮ মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। কয়েক মাসের মধ্যে তিনিও মারা যান। সেদিন রফিক মীর বাম পায়ে আঘাত পান। এরপর চিকিৎসায় তিনি সেরে উঠলেও জুতা পায়ে চলতে পারেন না।

দুঃখ করে রফিক মীর বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের পরিবারের এত বড় ত্যাগের সরকারিভাবে কোনো সম্মান ও সহযোগিতা পাইনি।  এখন শহরে ঘোল বিক্রি করেই চালাতে হচ্ছে জীবিকা।

আরো পড়ুন:

দৈনিক আয়ের একটি অংশ দিয়ে গরুর খাবার কিনতে হয়। বাকি টাকায় কোনোভাবে তার সংসার চলে। কিন্তু এ নিয়ে তার কোনো ক্ষোভ নেই। তার একটাই চাওয়া স্বজনহারার ব্যথা-বেদনা এবং ত্যাগের বিনিময়ে স্বীকৃতি।

মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী রাশেদুজ্জামান প্রদীপ জানান, রফিক মীরের ঘোল ও ঘি গরুর খাঁটি দুধের তৈরি। বাজারে তার ঘোলের চাহিদা রেয়েছে। কিন্তু তার আক্ষেপও কম নয়।

এ প্রসঙ্গে আমদহ ইউপি চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আরজুল্লাহ বলেন, ‘সরকার দেশজুড়ে আবেদন চেয়েছিল। অনেকেই করেছেন। রফিক মীর আবেদন করলে বিধিমতে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

মহাসিন আলী/তারা 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়