পায়ে লিখে ফজলুর এইচএসসি জয়
অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ফজলুর রহমান। জন্মগতভাবে তার দুই হাত ও একটি পা নেই। এক পা দিয়েই চলেন, সেই পা দিয়েই লেখেন। মনের জোরকে কাজে লাগিয়ে ফজলু বেলকুচির দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষায় জিপিএ-২.৭৫ নিয়ে নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
ফজলুকে কলেজে নিয়ে যাওয়া আসার কাজ করতেন তার ছোট বোন আসমা। সেও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৩৩ পেয়ে পাস করেছে।
ফজলু বলেন, ‘অনেক কষ্টে এক পা দিয়ে লাফিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের মিটুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেছি। বই-খাতা-কলম আসমা নিয়ে যেত। তবে সে না গেলে আমার স্কুলে যাওয়া হতো না। এই রেজাল্ট করতে পেরে আমি খুশি। তবে অভাব আমাকে সবসময়ই তাড়িয়ে বেড়ায়। একটি সরকারি চাকরি আমার জীবনের পরিবর্তন করে দিতে পারে। সবার সহযোগিতায় আমি আরও এগিয়ে যেতে চাই।’
ফজলুর বাবা দিনমজুর সাহেব আলী বলেন, ‘প্রতি দিন দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাই। এর মধ্যে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাবো কীভাবে। টাকার অভাবে কোনোদিন প্রাইভেট পড়াতে পারিনি, সঠিক সময়ে বইও কিনে দিতে পারিনি। ফজলুর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে। তা দিয়েই ওর লেখাপড়ার খরচ চলে। ৯ সদস্যের সংসার আমার একার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে ৭৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন মামুন বিশ্বাস। সেই টাকা দিয়েই পড়াশোনা করছে আমার ছেলে। এই টাকাটা না হলে হয়তো আমার ছেলে পড়তেই পারতো না।’
ফজলুর মা সারা খাতুন বলেন, ‘২০০০ সালে ফজলু বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে। কিছু কাজ নিজেই করতে পারে ফজলু। কিছু কাজে তাকে সাহায্য করতে হয়।’
দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, ‘ফজলু লেখাপড়ায় ভালো, স্মরণ শক্তি প্রখর। তার ফলাফলে আমরা খুশি। তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা দরকার। এজন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত।’
সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘ফজলুর পড়াশোনার ইচ্ছা দেখে এসএসসিতে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা অনুদান তুলে দিয়েছি। এ টাকা দিয়েই তার এতদিন লেখাপড়া চলেছে। তার পড়াশোনার ইচ্ছা রয়েছে।’
অদিত্য/ মাসুদ