ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

রমজানে প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ গরিবদের দেন জলিল

জয়পুরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৪, ২৩ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ২১:১৫, ২৩ এপ্রিল ২০২২
রমজানে প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ গরিবদের দেন জলিল

রমজান উপলক্ষে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ফন্দিফিকির করেন— কীভাবে ব্যবসায় অধিক লাভ করবেন। তবে এমনও অনেকেই আছেন, যারা গরিব ও অসহায় মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এমনই মানুষ জলিল ও রাবেয়া দম্পতি। তারা পুরো রোজার মাসে নিজেরা লাভবান না হয়ে এলাকার গরিবের মাঝে বিনামূল্যে গাভীর দুধ দিচ্ছেন। 

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের জলিল ও রাবেয়া দম্পতি। রমজান মাস এলে এলাকার গরিব, অসহায়, বিধবা ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের মাঝে বিনামূল্যে খামারের গাভীর দুধ বিতরণ করেন। অর্থের অভাবে যারা ভালো কিছু খেয়ে রোজা রাখতে পারেন না, তাদের জন্য রোজার শেষদিন পর্যন্ত এমন কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে জানান তারা। দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে যারা রোজা থাকছেন, আর প্রাণভরে দোয়া করছেন, এটাই তাদের বড় পাওয়া।

গ্রামের হামিদা বেওয়ার বয়স ষাট বছরের বেশি। স্বামী মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। একমাত্র ছেলেও বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। মায়ের খোজ-খবর রাখে না। হামিদা বেওয়া ভিক্ষাবৃত্তি করে একার সংসার চালায়। জলিলের বাড়ি থেকে প্রায় আধা লিটার দুধ প্লাস্টিকের মগে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। 

আরো পড়ুন:

দুধ কোথায় পেলেন— জানতে চাইলে হামিদা বেওয়া বলেন, ‘জলিলের বউ দিয়েছেন। এই দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে রোজ থাকবো।’ তাদের জন্য দোয়া করলেন বিধবা হামিদা। 

একই বয়সের বিধবা মনোয়ারার হাতের ছোট জগে দুধ দিচ্ছেন জলিলের স্ত্রী। কত টাকার দুধ নিলেন— জানতে চাইলে মনোয়ারা বলেন, ‘আমি দুধ কিনে খাবো টাকা পাবো কোথায়? রোজার প্রথম দিন থেকে জলিলের বউ দুধ দেন, টাকা নেন না। এই দুধ দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা থাকি।’ 

রতনপুর গ্রামের মৃত হাসেম আলীর ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার খামারে ৫টি বিদেশি জাতের গাভী আছে। এরমধ্যে ২টি গাভীর দুধ হয় না। ২টি মা হতে চলেছে, তাই অল্প দুধ হয়। ১টি ভালো দুধ দেয়। প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ লিটার দুধ হয়। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী যারা দুধ নিতেন এবং যারা টাকার অভাবে কিনতে পারেন না, রোজার প্রথম দিন থেকে সকলকে টাকা ছাড়াই দুধ দিচ্ছি।’  

জলিলের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘প্রতিদিন গাভীর খাওয়া খরচ দুধ বিক্রির টাকায় চলতো। কিন্ত স্বামীর আদেশ- রোজার মাসে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না। তাই সবাইকে প্রতিদিন গড়ে ২০ লিটার দুধ টাকা ছাড়াই দিচ্ছি।’  

স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মওলানা মো. হাছিবুল আলম বলেন, এমন কাজে সমাজের সকল বিত্তবান মানুষের এগিয়ে আসা উচিৎ। 
 

শামীম/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়