চকচকে মোড়কে সিলেটে নিম্নমানের চা পাতা
নূর আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম
নিম্নমানের চা পাতায় সয়লাব সিলেটের বাজার। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডর্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বিএসটিআই সিলেট এর একটি সার্ভিল্যান্স টিম বাজার পর্যবেক্ষণ করে এর প্রমাণও পেয়েছে। বিএসটিআইর মানচিহ্ন সম্বলিত চকচকে মোড়কে বেশ কিছু ব্রান্ডের নিম্নমানের চা পাতা বাজারজাত করণের প্রমাণও পেয়েছে তারা। এনিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্কও করেছে সংস্থাটি।
অভিযোগ রয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন সময় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় চা পাতা বাংলাদেশে এনে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করেছেন। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দেশি চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজারে নিম্নমানের চা পাতা বিক্রি হচ্ছে জানতে পারে বিএটিআই সিলটের বিভাগীয় কার্যালয়। সম্প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি সার্ভিল্যান্স টিম বাজার যাচাই করতে পাঠান তারা। এরপরই তারা বাজারে নিম্নমানের চা পাতা সরবরাহের তথ্য পান। বাজার পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৮ টি ব্র্যান্ড চিহ্নত করে বিএসটিআইর পক্ষ থেকে এসব চা পাতা সরবরাহের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
বিএসটিআই কর্মকর্তারা জানান, চায়ের চকচকে মোড়কে যে ঠিাকানা দেওয়া হয়েছে বাস্তবে সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেছে এ ধরনের কোম্পানির কোনো অস্থিত্বই নেই। এরমধ্যে সুমাইয়া কন্যজুমার প্রোডাক্টস কদমতলী ঢাকার কিং টি, তাসিন টি হাউজ স্টেশন রোড, শ্রীমঙ্গলের টাটকা ব্ল্যাক টি, শাহজালাল ফুড প্রোডাক্টস ঢাকার সিলেটের গোল্ড টি, টাইম টি স্টেশন রোড শ্রীমঙ্গলের টাইম টি, শাহজালাল ফুড প্রোডাক্টস চট্টগ্রামের মিয়াজীপুর ব্ল্যাক টি, এসপি ফুড প্রোডাক্টস ঢাকার শেভরন টি, হাবিব এগ্রো ফুড এন্ড বেভারেজ নিশ্চিন্তপুর আশুলিয়া সাভারের হংকং চা নামক ব্র্যান্ড রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে একটি চোরাচালানচক্র নিম্নমানের চা পাতা দেশের বাজারে নিয়ে আসছে। বিশেষ করে সিলেটের বাজারকে টার্গেট করে ওইচক্র তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিগত দিনগুলোতে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় চাপাতসহ চোরাকারবারিরা ধরাও পড়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে।
চা পাতা চোরাচালানি প্রসঙ্গে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে অলিপুর শিল্প এলাকা থেকে ২ হাজার কেজি চোরাই চা পাতাসহ ৬ চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই বছরের ৬ মার্চ সিলেটের সীমন্তবর্তী জৈন্তাপুরে ধরা পড়ে ভারতীয় চা পাতার একটি বড় চালান। ১১ হাজার ২২ কেজি চা পাতাসহ চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আটককৃত ওই চা পাতার দাম ছিলো ১০ লাখ টাকা।
একই বছরের ২৯ জুলাই অপর এক অভিযানে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ২০ বস্তা ভারতীয় চা-পাতাসহ আতিকুর রহমান আতিক নামে এক চোরাকারবারীকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ভোরে চুনারুঘাটের চানপুর চা বাগানের পাকা রাস্তায় আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় চা পাতা বোঝাই দুটি পিকআপ আটক করা হয়। ওই পিকআপ থেকে ৯১টি বস্তায় ৩ হাজার ৯১৩ কেজি চা পাতা জব্দ হয়। ওই চা পাতার আনুমানিক বাজার মূল্য পৌনে ১২ লাখ টাকা।
সিলেটের কালিঘাটের ব্যবসায়ী প্রবীণ সিংহ জানান, সিলেট অঞ্চলে চা উৎপাদন হওয়ায় একটি চোরাচালানচক্র এর সুযোগ নিচ্ছে। প্যাকেটজাত ছাড়াও খোলাবাজারে চা পাতা স্বল্প দামে বিক্রি করছে। মূলত এর কোন মান নেই। সাধারণ ক্রেতাদের নানাভাবে প্রতারিত করছে ওইচক্রটি।
সিলেট জেলা পুলিশের এএসপি (গণমাধ্যম) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অত্যন্ত নিম্নমানের চা বাংলাদেশে নিয়ে আসছে একটি চক্র। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসার পর বেশকয়েকটি চালান ধরা পড়েছে। পুলিশ এই চক্রটির ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।
র্যাব-৯-এর এএসপি (গণমাধ্যম) আফসান আল আলম জানান, র্যাব চোরাচালান রোধে তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে চোরাইপথে আসা বিভিন্নপণ্য জব্দ করছে র্যাব। একই সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
বিএসটিআই সিলেট বিভাগীয় অফিসের প্রধান ও উপ পরিচালক (সিএম) প্রকৌশলী মৃনাল কান্তি বিশ্বাস জানান, বাজারে চকচকে মোড়েক পাওয়া যায় এমন ৮টি ব্রান্ডের চা পাতার সন্ধান পাওয়া গেছে। যা অত্যন্ত নিম্নমানের। এই চা পাতা বাজারে বিক্রির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। বিএসটিআই বাজারে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
মাসুদ