ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু, বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৭ জুন ২০২২   আপডেট: ১০:৫৮, ৭ জুন ২০২২
উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু, বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়

পদ্মা সেতু। ছবি: শেখ মোহাম্মদ রতন

আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পদ্মা সেতু দেখার জন্য ভিড় করছেন।

খরস্রোতা-প্রমত্বা পদ্মার অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকনে এ সেতু দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। একদিকে সেতুর সৌন্দর্য যেমন দৃষ্টি কাড়ছে, অন্যদিকে পদ্মার স্বচ্ছ জলরাশিও টানছে সবার মন।

গত ৪ জুন সন্ধ্যা থেকে পদ্মা সেতুকে আলোকিত করতে বসানো ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। এতে আলোকিত হয়ে উঠছে পুরো পদ্মা সেতু।

আরো পড়ুন:

২৫ জুন সেতু হবে-এই খবরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে জমিদাতাসহ স্থানীয় মানুষের মাঝে বিজয়ের আনন্দ করতে দেখা গেছে।

পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: রাইজিংবিডি

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর শুনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাপদাদার ভিটেমাটি হারিয়ে শুরুতে কষ্ট থাকলেও এখন আমরা অনেক খুশি ও গর্ববোধ করছি।

এদিকে, ইট-পাথরের নগর জীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে পদ্মায় এ সেতুর সৌন্দর্য অবলোকন করতে লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ফেরিঘাট ও কান্দিপাড়াসহ সেতুর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় যেন মিলনমেলায় রুপ নেয়।

পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা বাবুল হোসেন বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আনবে না, সে সাথে এটি ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিশাল এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার ছুটাছুটি যে কাউকেই আকৃষ্ট করে। এখানে আসার এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটিও অসাধারণ।

ঢাকার মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা রোকসানা আক্তার বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিদিনই পদ্মা সেতুর খবর পাই। আজ বাস্তবে দেখার জন্য সকালেই ছুটে আসি পরিবার নিয়ে। সেতুর উপরে উঠতে পারলে খুব ভালো লাগতো। নিরাপত্তার কারণে  কাউকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঢাকা থেকে মাওয়ায় ঘুরতে আসা আরেক নারী জানান, যমুনা সেতু চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মানুষের যেমন দুর্ভোগ কমেছে এবার পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের দূঃখ-কষ্ট শেষ হবে। সড়ক পথে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে সহজে যাওয়া যাবে।

পদ্মা সেতু ও আশপাশ এলাকা ঘুরতে আশা মাইনুল ইসলাম আকাশ নামের আরও একজনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে সবই অপরূপ। পদ্মা সেতু, পদ্মা নদী সবই আকর্ষণীয়।

মাওয়া ঘাটে পদ্মার পারে আসা খুলনাগামী রোমানা বেগম ও সুজানা আক্তার নামে দুই বোন বলেন, প্রতিনিয়ত শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার ঘাটে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমাদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সময়ও অনেক কমে আসবে।

ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটে আসা শরীয়তপুরের মুকবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে নিজেদের টাকায় পদ্মার বুকে গর্বের সেতু দাঁড়িয়েছে। ২৫ জুন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের সেতু দিয়ে পারাপার হবে, এটা অনেক বড় আনন্দের খবর। 

অন্যদিকে, পদ্মার পাড়ে এখন উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষার তর সইছে না এখানকার বাসিন্দাদের।

ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ১৯ মে শেষ হয় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাই। গত ২৩ মে জাজিরা প্রান্তের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। সেতুর অবশিষ্ট কাজের মধ্যে রোড মার্কিং ও সেতুকে আলোকিত করতে বসানো ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ এখন শেষের পথে। পুরো দমে চলছে রেলিং বসানোর কাজ।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরপর পর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একই সাথে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো সহ অন্যান্য কাজ।  সেতুর মূল আকৃতি দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।

/রতন/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়