পদ্মা সেতু উদ্বোধন: কারাগারে উন্নত খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কারাগারে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের জহিরুল ইসলাম। ডাবল হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৯ বছর যাবত তিনি টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ ও উদ্বোধনের খবর তাদের কক্ষের বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো তিনিও যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন তা তিনি কখনও কল্পনাও করেননি। অবাস্তব হলেও সত্য তিনি সাধারণ মানুষের মতোই আনন্দ উপভোগ করেছেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন স্মরণীয় করে রাখতে শনিবার (২৫ জুন) টাঙ্গাইল কারাগারে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কারাগারে উন্নত মানের খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে কয়েকজন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আজ শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। আগামীকাল রোববার থেকে এই সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে।
কারাবন্দি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধে জড়িয়ে কারাবন্দি হলেও আমরাও মানুষ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ যে আমাদের কারাগার পর্যন্ত পৌঁছাবে, তা জানা ছিল না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আমাদের উন্নত মানের খাবার দিয়েছে। এছাড়াও নাচ-গানের আয়োজনও করা হয়েছে। এতে সমাজের সাধারণ মানুষের মতো আমরা আনন্দে উচ্ছ্বসিত।’
কারাবন্দিদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি। জেল সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-মামুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল হাশেম, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ।
জেলা প্রশাসন ও কারাগার সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর উৎসবের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে টাঙ্গাইল কারাগারের বন্দিদের মাঝে উন্নত খাবার পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কারাগারের দেড় সহস্রাধিক বন্দিদের মাঝে উন্নত মানের খাবার দেওয়া হয়। টাঙ্গাইল শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীসহ কারাগারের বন্দিরা পদ্মা সেতু নিয়ে নিজেদের লেখা গান পরিবেশন করেন।
কারাবন্দি শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাবু খন্দকার বলেন, ‘তিন বছর যাবত টাঙ্গাইল কারাগারে আছি। পারিবারিক বা সামাজিক অন্যান্য মানুষের মতো ভালো খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আনন্দের সময় জেলা প্রশাসন কারাবন্দিদের যে মনে রেখেছে, এতে আমরা খুব খুশি।’
মাদক মামলার আসামি ঘাটাইল সদর উপজেলার জুয়েল রানা বলেন, ‘চার মাস যাবত টাঙ্গাইল কারাগারে আছি। এত দিন নিজেকে অপরাধী বা কারাবন্দি মনে হলেও আজ নিজেকে স্বাধীন মনে হচ্ছে। খুব আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছি।’
মধুপুরের মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পদ্মা সেতু উপলক্ষে কারাগারে উন্নত মানের খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই। তাদের প্রতি আমরা কারাবন্দিরা কৃতজ্ঞ।’
জেল সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় কারাগারে বিশাল আয়োজন হওয়ার জন্য আমি গর্বিত। এতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর কারাগারে কোনো আয়োজন হয়নি। করোনার পর কারাগারে এটাই বড় আয়োজন। ১৪৯৩ বন্দির জন্য আয়োজন ছিল। ইতোপূর্বে খাবারের মান যাচাই করার জন্য একটু খেতাম। আজ বন্দিদের সঙ্গে খাবার খেতে পেরে আমরাও খুব আনন্দিত।’
জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘পদ্মার সেতুর আনন্দ থেকে যাতে কেউ বাদ না পড়ে সেই জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে টাঙ্গাইল কারাগারে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কারাবন্দিদের সঙ্গে আমরা অতিথিরাও খাবার খেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি।’
কাওছার/বকুল