রংপুরে দাবদাহে আমন চাষাবাদ ব্যাহত
আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম
রংপুর অঞ্চলে টানা দুই সপ্তাহের দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড রোদ আর ভাপসা গরমে সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ দিশেহারা। এতে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অনেকে জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র খরায় চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উপায়ে ধান লাগানো হয়েছে। চলমান খরায় সেচের মাধ্যমে আমন লাগালে কৃষকের খরচ তিনগুণ বেড়ে যাওয়াসহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিন শনিবার (১৬ জুলাই) রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা, পীরগাছা উপজেলার বেশকিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে ফাঁকা জমি পড়ে থাকলেও পানির অভাবে চারা লাগাতে পারছে না অধিকাংশ কৃষক। অনেকে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করার চেষ্টা করছে। তবে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমত সেচও দিতে পারছে না।
শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করে ধানের চারা রোপণকালে কথা হয় গঙ্গাচড়া উপজেলার বেগাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে। এক একর জমিতে দুই দিন লাগাতার পানি দিয়েও চাষ করতে পারছেন না তিনি। কুদ্দুস বলেন, ‘আগাম ধান লাগাবো বলে মাঝখানে একটি ফসল মিস করেছি। বৃষ্টির আশায় থাকতে থাকতে বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে জমি প্রস্তত করেছি। রোদের যে মাত্রা, তাতে পানি দিতেই শুকে যাচ্ছে। টানা ২৬ ঘণ্টা পানি দিয়ে জমি নামমাত্র প্রস্তুত করে চারা রোপণ করেছি।’
একই এলাকার কৃষক আলম মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি নেই। আবার ডিজেলের যে দাম তাতে আমন লাগানো ব্যয়বহুল হবে। এই রোদে নিজের ৭৫ শতাংশ জমি প্রস্তুত করতে পারছি না। এদিকে ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই আবহাওয়া বিরাজ করলে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করলেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাবে না।’
কুদ্দুস, আলমের মতো রংপুর অঞ্চলের হাজারও কৃষক বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও কৃষি বিভাগ আগামী আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমন লাগানোর সময় আছে বলে কৃষকদের ধৈর্য ধরতে বলছে। কিন্তু নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী নির্ধারিত ফসলের কথা চিন্তা করে আমন লাগাতে উদগ্রীব কৃষকরা।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান জানান, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমন ধানের চারা রোপণ করা যায়। এরই মধ্যে সেচের মাধ্যমে জেলার কৃষকরা আমন রোপণ শুরু করেছে। তবে এতে কৃষকের খরচ বেড়ে যাবে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, দুই সপ্তাহ ধরে রংপুর অঞ্চলে অস্বাভাবিক আবহাওয়া ও তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। গরম বাতাসে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রংপুরে গত দুই দিন থেকে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। তবে এ তাপমাত্রা আরও দু’-এক দিন থাকার পর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
/বকুল/