ঢাকা     রোববার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১৭ ১৪৩১

মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাবা নিজেই

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ২ আগস্ট ২০২২  
মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাবা নিজেই

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তালুক ঈশাদ নয়াটারি গ্রামে এক সপ্তাহ আগে মাটি খুঁড়ে নাম না জানা এক নারীর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পীরগাছা থানা থেকে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তখন তরুণীর বাবা থানায় লাশটি তার নিখোঁজ মেয়ের বলে জানান। এরপর তিনি মামলাও করেন। 

মামলার সাত দিনের মাথায় পুলিশ জানিয়েছে, লিপি বেগম নামের ওই নারীকে তার বাবা নিজেই হত্যা করেছেন। মূলত মেয়ের ‘অসামাজিক কার্যকলাপে’ অতিষ্ঠ হয়ে খুন করে মেয়ের লাশ মাটিতে পুঁতে রাখেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ঘাতক বাবা রফিকুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ।

আরো পড়ুন:

আশরাফুল আলম পলাশ বলেন, গত মাসের ২৫ তারিখ নয়াটারি এলাকার একটি সমতল জমিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি সংলগ্ন জাগায় উঁচু মাটির ঢিবি দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে মাটি খুঁড়ে নাম না জানা এক নারীর লাশ দেখতে পান লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে মাটির নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেদিনই লাশটি নিজের বোন লিপির বলে দাবি করেন উপজেলার অনন্তরাম (বড়বাড়ি) এলাকার শামীম মিয়া।

পুলিশ এ ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য মারা যাওয়া লিপির বাবা রফিকুল ইসলামকে থানায় ডাকেন। কিন্তু তিনি মামলা দায়ের না করার জন্য গড়িমশি শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের ওপর সন্দেহ যায় পুলিশের। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে লিপির অবস্থান বাড়িতেই ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাই শামীমসহ পরিবারের চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় আনা হয়। এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম মেয়েকে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই হত্যা করেন বলে স্বীকার করেন। 

রফিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাদ দিয়ে এএসপি আশরাফুল ইসলাম পলাশ জানান,  মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর এলাকায় এসে মাদকের ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন লিপি। এনিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়। একপর্যায়ে তাকে জোর করে ঢাকার সাভারে পাঠানো হয়। সেখানে লিপি একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ পায়। সর্বশেষ গত কোরবানির ঈদে ছুটিতে বাড়িতে আসলে মেয়ে গর্ভবতী বলে জানতে পারেন রফিকুল ইসলাম। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন তিনি। গত ২২ জুলাই রাত ১টার দিকে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর বাড়ির পাশের জমিতে লাশ পুতে রাখেন তিনি। দুইদিন পর আবারো লাশটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে মাটি চাপা দেন তিনি। 

তিনি আরো জানান, রফিকুল ইসলাম স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত রফিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

আমিরুল/ মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়