ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

ছায়াছন্দ  ও আলোছায়া বন্ধ, দ্রুত চালুর দাবি সিনেমাপ্রেমীদের

আবু নাঈম, পঞ্চগড় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১২ আগস্ট ২০২২   আপডেট: ১০:৫১, ১২ আগস্ট ২০২২
ছায়াছন্দ  ও আলোছায়া বন্ধ, দ্রুত চালুর দাবি সিনেমাপ্রেমীদের

পঞ্চগড়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সিনেমা হল

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আগুনে পুড়ে যাওয়া আলোছায়া প্রেক্ষাগৃহকে চালু করার জন্য শিল্প ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার বিশেষ আগ্রহে পঞ্চগড় শহরের একমাত্র সিনেমা হলটি আবার চালু হয়। ৯০ দশকে আলোছায়া প্রক্ষাগৃহের পাশেই গড়ে ওঠে ছায়াছন্দ সিনেমা হল। 

এই দুই প্রেক্ষাগৃহকে কেন্দ্র করে শহরের মূল রাস্তার নামও হয়ে যায় সিনেমা রোড। বর্তমানে সিনেমা রোড আছে, আছে হলের ভবন। শুধু দরজায় ঝুলছে তালা। ২০১৬ সালের দিকে দুটো হলই বন্ধ হয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

এদিকে লোকসান বাড়তে থাকায় ২০১৪ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায় সদর উপজেলার টুনির হাট বাজারের ঝংকার সিনেমা হল। হল মালিক ওয়াজেদ আলী এখন ভবনটিকে ভাঙ্গারির ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন। হলটি এখন পুরোনো কাগজ আর ভাঙারির গুদাম। 

পঞ্চগড় জেলার ১০ লাখ মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত ১৩টি সিনেমা হল এখন পুরোপুরি বন্ধ। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় প্রেক্ষাগৃহে নতুন ছবি এলে মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হতো গ্রামগঞ্জে। অনেক সময় ব্ল্যাকে ছাড়া টিকিট মিলত না। ছবি দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শক ভিড় করতেন হলগুলোতে। অথচ গত অর্ধ যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে এই সিনেমা হলগুলো। সিনেমা ব্যাবসায় ধস নামলে হলগুলো বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। এতে সিনেমা প্রেমীরা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারছেন না। 

সিনেমা প্রেমীরা বলেন, এখন দেশে অনেক ভালো ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু হলগুলো বন্ধ থাকায় পরিবার পারিজন ও বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে হলে বসে সিনেমা দেখা হচ্ছে না। এতে বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এছাড়া তরুণ সমাজ মোবাইলে আশক্ত হয়ে পড়ছে। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনে সাংস্কৃতিক সংকটও তৈরী হচ্ছে। সিনেমা প্রেমীদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলো পুনরায় চালু করার।

পঞ্চগড়ের নাট্যকর্মী আব্দুর রউফ বলেন, ‘দেশে এখন ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। আমাদেরও ইচ্ছে করে পরিবার পরিজন নিয়ে হলে বসে সিনেমা দেখতে। কিন্তু হলগুলো বন্ধ থাকায় আমরা বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

হল মালিকরা জানান, ভালো সিনেমার আশায় দিন গুণছেন তারা। সরকারি সহযোগিতা পেলে আবার সিনেমা হল চালু করার আগ্রহ রয়েছে তাদের। 

আলোছায়া ও ছায়ছন্দ প্রেক্ষাগৃহের মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হলে পুড়ে গিয়েছিলো। এই এলাকায় তখন একটাই সিনেমা হল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঞ্চগড় একবার এই হলেই কর্মীসভা করেছিলেন। তখন ভঙ্গুর অবস্থা দেখে হল চালু করার জন্য তিনি শিল্প ব্যাংক থেকে আমাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কাটপিস সিনেমা ব্যবসা শুরু হলে হল বন্ধ করে দেই। এখন ভালো সময় এসেছে। সরকার সহযোগিতা করলে অবশ্যই আমরা দুটি প্রেক্ষাগৃহই চালু করবো।’ 

একই কথা জানান টুনিরহাট ঝংকার সিনেমা হলের মালিক ওয়াজেদ আলীর ছেলে জাকির হোসেন।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়বুর রহমান বলেন, ‘সিনেমা হলগুলো চালু করতে হলে অবশ্যই হল মালিকদের সহযোগিতা করতে হবে। আর এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন।’ 

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘অপসংস্কৃতির ধারা থেকে মানুষকে ফেরাতে হলে সুস্থ্য বিনোদন দিতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলোর তালিকা প্রনয়ণ করেছি। মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়