অষ্টম দিনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, নষ্ট হচ্ছে চা পাতা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ন্যায্য মজুরির দাবিতে হবিগঞ্জে আন্দোলনরত শ্রমিকরা অনড় রয়েছেন। কাজে যোগ না দিয়ে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন তারা। এতে প্রতিটি বাগানেই নষ্ট হচ্ছে চা পাতা। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন বাগানগুলোর মালিকরা।
এদিকে শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। সভায় হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান ও শ্রমিক নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার পূর্ণদিবস ধর্মঘটের অষ্টম দিনেও চা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। এতে উত্তোলনকৃত চা পাতাগুলো ফ্যাক্টরিতেই নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে গাছের চা পাতা বড় হওয়ায় সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘শ্রমিকরা এবার তাদের দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন। দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবে।
সরেজমিন জানা গেছে, ধর্মঘট চলায় অধিকাংশ শ্রমিকের ঘরে খাবার নেই। ভয়াবহ কষ্টে কাটছে দিন তাদের। মজুরির বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কাগজে থাকলেও অধিকাংশই বাস্তবে নেই বলে দাবি শ্রমিকদের।
মালিকপক্ষ বলছে, গত ১০ বছরে চায়ের দাম না বাড়লেও শ্রমিক মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৭৪ শতাংশ।
জানা গেছে, ৩০০ টাকা মজুরি আদায়ে ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে টানা ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টায়। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে দাবি আদায়ে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার ৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে ২৫টি ফ্যাক্টরিযুক্ত চা বাগান রয়েছে। এছাড়া ফাঁড়িসহ প্রায় ৪১টি বাগানের প্রায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়।
মামুন চৌধুরী/ মাসুদ