১২০ টাকার করুণ জীবন চা শ্রমিকদের
মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
ভগ্ন স্বাস্থ্য অপুষ্টির শিকার। পুষ্টিকর খাবার দূরের কথা দু-বেলা পেটভরে ভাত জুটানোই কঠিন। নৈমিত্তিক কোনো ছুটি নেই। বাসস্থানের তেমন উন্নতি হয়নি। ছোট্ট একটি কুঠিরে গাদাগাদি করে মা-বাবা, ছেলে, মেয়ে ও পুত্রবধূ নিয়ে বসবাস। এরই মধ্যে যোগ হয়েছে চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন। ফলে সংসারে দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি বাগানের শ্রমিক বাবুলাল মাল, শ্রীমতি বাগতি, অঞ্জনা মহালী, বজেন্দ্র গোয়ালা, বীরেন্দ্র বাগতি এভাবেই নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানালেন।
চা শ্রমিকরা বলেন, চা বাগান শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। ১২০ টাকা মজুরিতে অনেক সময় খেয়ে না খেয়ে কাজে যোগ দিতে হয়। আমরা উন্নত জীবন থেকে বঞ্চিত। এভাবেই একদিন এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হবে। আমাদের মতো শত শত শ্রমিক দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে ধর্মঘট পালন করছেন। শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। মজুরি বৃদ্ধি পেলে সামান্য কিছুটা হলেও শ্রমিকরা বাঁচতে পারবে। ১২০ টাকায় আমাদের করুন জীবন কাটাতে হচ্ছে।
শ্রমিকরা বলেন, আমরা চাই বাগান মালিকরা আমাদের এই দাবিটুকু যেন মেনে নেন।
বাবুলাল মাল নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা সারাদিন চা বাগানে কাজ করে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি পাই, যা দিয়ে ২ কেজি চালও কিনতে পারি না। এক লিটার তেলের দামও ২০০ টাকার বেশি। এই ভাবে জীবন চলে না।’
এদিকে আটদিন ধরে চলা ধর্মঘটে বাগানগুলোতে লাখ লাখ টাকার চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। যেখানে সকাল হলে বাগানগুলোতে চা পাতা উত্তোলনে শ্রমিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যস্ত ছিলেন। এখানে ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে বাগানগুলো।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ১২০ টাকা দুই কেজি চাল কিনতেই শেষ। বাকিটা কিভাবে চলবে। এখানে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে দাবি আদায়ে ধর্মঘটে নেমেছে। মনে রাখতে হবে শ্রমিকরা বাগানের প্রাণ। তাই প্রাণকে টিকিয়ে রাখতে হলে ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। এছাড়া বিকল্প পথ নেই।
জানা গেছে, ৩০০ টাকা মজুরি আদায়ে ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে টানা ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর এই বৈঠক হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টায়। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক নেতারা বৈঠক করে দাবি আদায়ে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, চুনারুঘাট, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার ৭০৩.২৪ হেক্টর জমিতে ২৫টি ফ্যাক্টরিযুক্ত চা বাগান রয়েছে। এছাড়া ফাঁড়িসহ প্রায় ৪১টি বাগানের প্রায় প্রতি হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ কেজি চা পাতা উৎপাদন হয়।
আরো পড়ুন: অষ্টম দিনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, নষ্ট হচ্ছে চা পাতা
মাসুদ