ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

বাবা-বোনের লাশের জন্য ৩ দিন করতোয়া পাড়ে স্বপন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৭:৪৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বাবা-বোনের লাশের জন্য ৩ দিন করতোয়া পাড়ে স্বপন

করতোয়া নদীর পাড়ে স্বপন রায়

মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মেয়ে অনিকা রাণীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন স্বরেন্দ্রনাথ রায় (৬০)। রাত যাপন করেন বড় মেয়ে কনিকা রাণীর বাড়িতে। পর দিন দুই মেয়ে, বড় মেয়ের স্বামী এবং স্বামীর বোনসহ রওনা হন অনুষ্ঠানে। কিন্তু অনুষ্ঠানে পৌঁছার আগে নৌকাডুবির শিকার হন তারা। এতে স্বরেন্দ্রনাথ রায়ের বড় মেয়ে আর জামাতা লাশ হয়ে ফিরলেও এখনও খোঁজ মেলেনি আরেক মেয়েসহ স্বরেন্দ্রনাথের।

বাবা এবং বোনের মরদেহ না পেয়ে তৃতীয় দিনেও করতোয়ার পাড়ে অপেক্ষা করছেন স্বরেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে স্বপন রায়।

স্বপন রায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের কলেজপাড়ায়। তার বড় বোন কনিকা রাণীর বাড়ি মাড়েয়া ইউনিয়নের বটতলীতে।

আরো পড়ুন:

করতোয়া নদীর পাড়ে কথা হয় স্বপন রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাবার চোখেমুখে ছিল মহালয়ে যাওয়ার আনন্দ। অথচ এখন আমাদের পরিবার জুড়ে কান্না। এখনও বোন এবং বাবার লাশ পেলাম না। লাশগুলো পেলে অন্তত নিজ হাতে সৎকার করতে পারতাম। ছেলে হিসেবে সৎকারের সময় বাবার মুখাগ্নী দিতে পারতাম।’

গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে প্রশাসন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকায় দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।

ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। আজকে (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতের মধ্যে এই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। 

নাঈম/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়