ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, গোপালগঞ্জে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ২৬ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ১০:৩৯, ২৬ অক্টোবর ২০২২
সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, গোপালগঞ্জে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট। ছবি: রাইজিংবিডি

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষানী আরতী বিশ্বাস (৩৫)। তার স্বামী বিধান বিশ্বাস একজন কৃষক। সংসারে রয়েছে দুই ছেলে-মেয়ে। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এ বছর ২ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেছিলেন।

স্বপ্ন ছিল জমিতে যেসব ফলস ফলবে তা বাজারে বিক্রি করে ছেলে মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ চালাবেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হতে বসেছে। এখন দিন রাত পরিশ্রম করে চেষ্টা করছেন জমির ফসল বাঁচতে।

শুধু কৃষানী আরতী বিশ্বাস নয় এমন গল্প গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

আরো পড়ুন:

ভেঙে গেছে গাছপালা। ছবি : রাইজিংবিডি

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত থেকে দমকা হওয়ার সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি নিয়ে গোপালগঞ্জে আঘাত হানে সিত্রাং। রাতভর চলে ঝড়ের তাণ্ডব। এতে আরতী বিশ্বাসের মতো কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান, টমেটো গাছ, শীতকালীন শাক-সবজি, পেঁপে ও কালা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘের পাড়ে লাগানো টমেটো গাছসহ অন্যান্য গাছ জমিতে হেলে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে গাছে আসা ফুল ও ফল। এসব গাছে আর ফুল ও ফল না আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পেঁপে ও কলা বাগানে সব গাছ ভেঙে গিয়ে নষ্ট হয়েছে।

নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতে নতুন করে ফসল লাগতে বিপাকে পড়েছেন তারা। নতুন ফসল রোপন করতে কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শসহ আর্থিক অনুদানের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি, কলা ও পেঁপের চাষ করা হয়েছিল। আমন ধানের ১০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে লতা জাতীয় সবজি এবং কলা ও পেঁপে ক্ষেতের। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে এ ঝড়ে জেলায় ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষানী আরতী বিশ্বাস বলেন, আমাদের কোনো জমি নেই। পরের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। মেয়ে কলেজে আর ছেলে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। পুঁজি যা ছিল চাষাবাদে খরচ করেছি। ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে এখন পথে বসতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের আর্থিক সহায়তা না করে তাহলে আমাদের আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

একই এলাকার কৃষক শ্যামল মালাকার বলেন, গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছর সাড়ে ৬ কাঠা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আগাম এসব ফল তুলতে পারলে টমেটো প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা লাভ করতে পারতাম। কিন্তু গাছ নষ্ট হওয়ায় যে ফুল এসেছে তাতে আর ফল হবে না। 

সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। ছবি: রাইজিংবিডি

কৃষক ভজন মালাকার বলেন, পৌনে দুই বিঘা জমি নিয়ে আমি কলাগাছের চাষ করেছি। ঝড়ের একদিন আগে জমিতে ৫ হাজার টাকা সার কিনে দিয়েছি। কিন্তু ঝড়ে আমার সব গাছ ভেঙে গেছে। একটি গাঝেও ফল ধরবে না। যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হবে না। 

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ক্ষতির পরিমাণ জরিপ করতে আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করছি। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইতিমধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিবে না আর্থিক প্রণোদনা দিবে তা সরকার সিদ্ধাস্ত নিবে। এরপর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পারবো।

/বাদল/সাইফ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়