দালাল ধরলে পাসপোর্ট মেলে তাড়াতাড়ি
মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সহজে পাসপোর্ট করতে আবেদনকারীরা দালাল ধরতে বাধ্য হচ্ছেন। দালালের মাধ্যমে জমা দেওয়া পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি মেলে বিধায় দালালের কাছেই যান গ্রহীতারা। আর তা না হলে ধীর গতিতে চলে কার্যক্রম। এমনটি অভিযোগ করেছেন সেবাগ্রহীতারা।
এদিকে অনলাইনে ফরম পূরণ করে নিজে পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র জমা দিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয় গ্রহীতাকে। নির্ভুলভাবে সব তথ্য দিয়ে অনলাইনে ফরম পূরণ করলেও ‘কাগজে ভুল আছে’ বলে হয়রানি করেন কর্মকর্তারা বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এমনই দৃশ্যই দেখা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে। এছাড়াও ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট গ্রহীতারা সরকারি ফি জমা দিয়েও কাঙ্খিত সময়ে সেবা না পাওয়ায় তাদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
পাসপোর্ট অফিসের কার্মকর্তাদের দাবি, এসব অনৈতিক কার্মকাণ্ডে তাদের অফিসের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পাতার সাধারণ পাসপোর্টের নির্ধারিত ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা হলেও দালালরা নিচ্ছেন ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে জরুরি পাসপোর্টের নির্ধারিত ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা হলেও দালালরা সেবা গ্রহীতাদের পকেট বুঝে ‘দামদর’ করেন। কোনো কোনো দালাল জরুরি পাসপোর্টের জন্য ১৪ হাজার টাকাও নিয়ে থাকেন।
রুহুল আমিন নামের এক সেবা গ্রহীতা বলেন, ‘পাসপোর্টের কাগজ জমা দিয়েছি একজনের মাধ্যমে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেলাম। নিজের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য কাগজ জমা দিয়ে আসলে দেরি হতো। মূলত এই কারণে লোকের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলাম।’
পাসপোর্ট করতে কতো টাকা খরচ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট করার জন্য ওই লোককে মোট সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বেশি ঘোরাঘুরি করেত হবে না তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য বেশি টাকা দিয়েছি।’
মোস্তাফিজুরর রহমান নামের অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘পাসপোর্টের জন্য নিজেই ফরম পূরণ করে অফিসে কাগজ জমা দিতে গেছিলাম। লাইনে দুই-আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। কাজের অনেক ধীরগতি, লাইন ধরে সিরিয়ালে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এইভাবে মানুষরা হয়রানি সম্মুখীন হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পাসপোর্ট অফিসেরই কিছু লোক আছে যারা নিজেদের লোকজন দিয়ে টাকার বিনিময়ে অনেকের কাছ থেকে কাগজ জমা নিয়ে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট করে দিচ্ছেন। এছাড়াও এই অফিসে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাদের কাজ কচ্ছপ গতিতে হচ্ছে। অফিসে দালালদের বিচরণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সাধারণ সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি কমবে না।’
আনোয়ার নামের এক ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট গ্রহীতা বলেন, ‘ইমার্জেন্সি পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে যথা নিয়মে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। দুই সপ্তহের মধ্যে ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট বই হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও এখানো পাইনি। বরং এই অফিসে দিনের পর দিন ঘুরে হয়রানির শিকার হয়েছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাসপোর্টের আবেদনকারীরা যদি সচেতন না হয় তবে কর্মকর্তাদের কিছু করার থাকে না। তারপরেও ফরম গ্রহণের সময় সবাইকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেউ অতিরিক্ত টাকা দিয়েছেন কি-না। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকলে সেটাও উদ্ধার করে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রয়োজনীয় কিছু কাগজ জমা দিতে ভুলে যান। সে ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের একটু বিলম্বের সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া লোকবল কম থাকায় কাজে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।’
মাসুদ