ঢাকা     শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৫ ১৪৩১

হই হুল্লোড় করে প্রথম পিকনিক করলো ওরা

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ২০ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১০:৪০, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
হই হুল্লোড় করে প্রথম পিকনিক করলো ওরা

কুমিল্লা নগরীতে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের মেয়েরা।

সামিয়া আক্তার। দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করা ছোট এই শিশুটির বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। দাদির কাছে মেয়েকে রেখে মাও অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন। দাদির সামর্থ্য নেই সামিয়াকে লেখাপড়া শেখানো বা জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করার। তাই গত দেড় বছর ধরে কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ সরকারি শিশু পরিবারে থাকছে সে। মাঝে মধ্যে তিতাস উপজেলার নারায়নপুর থেকে এসে নাতিনকে দেখে যান দাদি।

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া জান্নাতের বাড়ি কুমিল্লা ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার শশীদলে। তিন ভাই ২ বোনের মধ্যে জান্নাত চতুর্থ। বাবা মারা গেছেন।বাবার কোনো স্মৃতি মনে নেই তার। অভাবের সংসারের কারণে জান্নাতকে তার মা  সরকারি শিশু  পরিবারে দিয়ে যান। গত ৪ বছর ধরে জান্নাত শিশু পরিবারে আছে।

কুমিল্লা নগরীর সংরাইশে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের কন্যাদের গল্পগুলো এমনই। কারো বাবা নেই। কারো মা নেই। কারো বাবা মা কেউ নেই। ওরা এতিম। সরকার থেকে তাদের লেখাপড়া ও জামা কাপড়েরর জন্য যে বরাদ্দ আসে তা দিয়েই চলে তাদের।  

গত এক যুগের মধ্যে এবারই প্রথম নিজেদের আবাস ছেড়ে বাইরে গিয়ে পিকনিক করেছে এতিম শিশুরা। সকালে সবাই বাসে চড়ে কুমিল্লা নগরীর ডুলিপাড়ায় অবস্থিত ফান টাউনে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন রাইডে উঠে আনন্দ করেছে তারা। পরে মোরগ পোলাউ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছে। তার আগে কেক কেটে আনন্দ করেছে। ছবি তুলেছে। দোলনায় চড়ে আনন্দে মেতেছে। বিকেলে বিভিন্ন রকম খেলায় অংশগ্রহণ করেছে।  

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ছিল এই এই এতিম শিশুদের কাছে স্মরণীয় একটি দিন।

নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া শারমিন আক্তার বলেন, ‘এটা আমার জীবনের প্রথম পিকনিক। আমি খুব মজা করেছি। আমি দুইবার ঘোড়ায় চড়েছি।’ 

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া হাবিবা আক্তার  বলেন, ‘আমি দুইবার ট্রেন চড়েছি। অনেক মজার মজার খাবার খেয়েছি। খুব মজা লাগছে।’

কুমিল্লা সংরাইশ শিশু পরিবারের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট শরফুন্নাহার মনি বলেন, ‘সংরাইশ সরকারি শিশু (বালিকা) পরিবারে ৭৬ জন কন্যা শিশু রয়েছে। সরকার থেকে বরাদ্দ করা আছে খাবার, পোষাক ও লেখাপড়ার খরচ। পিকনিকের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও শিশুদেরকে বছরে একবার পিকনিকে নেওয়া সম্ভব না।  সোমবার তাদের জন্য পিকনিকের ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা। এই আয়োজনে বাচ্চারা খুবই খুশি। তাদের আনন্দ দেখে বোঝার উপায় নেই এই শিশুদের বাবা-মা নেই। আমি শিশুদের আনন্দে আপ্লুত হয়েছি।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বলেন, ‘২০১৬ সালে জাগ্রত মানবিকতা আর্তমানবতার সেবায় পথচলা শুরু করে। প্রথম দিকে অসুস্থ রোগীদের জন্য রক্তের সংগ্রহ করা হতো। ধীরে ধীরে সংগঠনটি রক্ত সংগ্রহ, অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো, বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সোমবার ছিলো আমার এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই এবার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবো এতিম শিশুদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এতিম শিশুদের নিয়ে আসি ফান টাউন পার্কে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘কেক কেটে আনন্দ করে শিশুরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। ওই খুবই আনন্দ পেয়েছে। আমাদের এই অনুষ্ঠানের কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার ও আমার কুমিল্লা ডায়াবেটিকস সমিতির সভাপতি মেহেরুন্নেচ্ছা বাহার উপস্থিত থেকে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই মুহূর্তগুলো আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছে।’

শিশুদের সঙ্গে পিকনিকে আসা কুমিল্লা নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনজুর কাদের মনি বলেন, ‘এই এতিম শিশুদের পাশে আমাদের সবার থাকা উচিৎ। ওরা আমাদের সন্তান। ওদের জন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিৎ।’ 

ফান টাউনের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল আহমেদ রানা বলেন, ‘এখানে সব সময় কর্পোরেট প্রোগ্রাম হয়। আজ শুধু ব্যতিক্রম আয়োজন ছিলো আমাদের। একদল শিশু আমাদের পুরো পার্কে নেচে গেয়ে আনন্দ করেছে। নৈস্বর্গিক দৃশ্য ছিলো। এটা কতোটা আনন্দের বলে বোঝানো যাবে না।’ 

রুবেল/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়