ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

বড়দিন উদযাপনে উৎসবমুখর পাবনার খ্রিস্টান পল্লী

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১০:৩৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
বড়দিন উদযাপনে উৎসবমুখর পাবনার খ্রিস্টান পল্লী

বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার গির্জাগুলোকে সজিয়ে তোলা হয়েছে।

দুই হাজার বছর আগে বর্তমান ফিলিস্তিনের দক্ষিণ জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোশালায় মাতা মেরির গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন যিশু খ্রিস্ট। সেই থেকে প্রতিবছরের ২৫ ডিসেম্বর সারাবিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা মহাসমারোহে পালন করেন যিশুর জন্মদিন। যিশু মানুষকে দেখিয়েছিলেন মুক্তি ও কল্যাণের পথ।

আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন।’  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের গির্জায় গির্জায় চলছে সাজসজ্জা। বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থানে শোভা পাচ্ছে বর্ণিল রূপে সাজানো ক্রিসমাস ট্রি কিংবা সান্তাক্রুজের ছবি। কেক কেটে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবে অংশ নেন। 

বড়দিন উদযাপনকে সামনে রেখে তাই পাবনার খ্রিস্টান পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। উপাসনালয়সহ বাড়ি আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরী, ক্রিস্টমার্স ট্রি সাজানো হয়েছে। নানা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ৩০টি গ্রামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন।

আরো পড়ুন:

যিশু খ্রিস্টের বানী জগতে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হোক, ধনী-গরীবের ভেদাভেদ ভুলে সবার মধ্যে যাতে মিলন বজায় থাকে এমন প্রত্যাশায় এবার বড়দিন উদযাপন হবে বলে জানিয়েছেন পুরোহিতরা। 

পাবনা জেলায় বড়দিন উৎসব শান্তিপূর্ন উদযাপনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। পাবনায় এবার ২৩টি চার্চে বড়দিনের প্রার্থণা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যেই বড়দিন উদযাপনে গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে নানা রং বেরংয়ের সাজে। বাড়িঘর আলোকসজ্জা, গোশালা তৈরী, ক্রিস্টমার্স ট্রি সাজানো হয়েছে। আল্পনার রঙে গির্জা ও বাড়ির আঙিনা সেজেছে নতুন সাজে। স্বজনদের সঙ্গে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা।

বড়দিন ঘিরে অতিথিদের আপ্যায়ন করতে বাড়ির গৃহিনীদের ব্যস্ততারও কোনো কমতি নেই। অতিথিদের আপ্যায়ন করতে পিঠাপুলির আয়োজন করেছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ন পরিবেশে উদযাপন করবেন শুভ বড়দিনের উৎসব।

চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা গ্রামের লিয়া দাস ও মথুরাপুর গ্রামের কল্যাণ কস্তা জানান, আমাদের সবার মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। সাধ্যমতো প্রত্যেক বাড়িতে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা করেছেন। আল্পনা আঁকা হয়েছে বাড়ির আঙিনা-দেওয়ালসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রভু যিশু খ্রিস্ট বেথলেহেমের যে গোশালায় জন্মেছিলেন, তার আদলে প্রত্যেক বাড়িতে গোশালা স্থাপন ও সেটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।

পাবনা শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর এলাকার গৃহিনী সুদিপ্তা চৌধুরী ও চামেলী ডি কস্তা জানান, আমরা ঘর সাজিয়েছি ক্রিস্টমাস ট্রি দিয়ে। গোশালাও তৈরী করেছি। অতিথিদের জন্য পিঠা, পায়েশসহ বিভিন্ন খাবার তৈরী হচ্ছে। বড়দিনের আনন্দ ভাগ করে নিতে বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন।

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক উত্তম দাশ বলেন, ‘বড়দিন উদযাপনে সপ্তাহব্যাপী অনেক রকমের আয়োজন করা হয়েছে। নগর কীর্তন, বড়দিনের উপাসনা, কেক কাটা, পিঠা পর্ব, প্রীতিভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নানা আয়োজন রয়েছে। প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ন পরিবেশে এবারের বড়দিনের উৎসব উদযাপন করতে পারবো বলে আশা করছি।’ 

চাটমোহরের মথুরাপুর ধর্মপল্লীর সহকারী ফাদার স্বপন পিউরিফিকেশন বলেন, “পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং অন্তরের অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখানোর বানী নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন যিশু খ্রিস্ট। তিনি বলেছেন, ‘ধনী-গরিবে কোনো ভেদাভেদা থাকবে না। মানুষে মানুষে মিলন, শান্তি যেন স্থাপিত হয় যেন গোটা বিশ্বে।’ এমন প্রত্যাশা থাকবে এবারের বড়দিনে।”

পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনশী বলেন, ‘শান্তিপূর্ন পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে বড়দিন উদযাপন করতে পারেন সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব চার্চে, গীর্জায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকি পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি আগাম তথ্য পাওয়ার জন্য সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। উৎসবে যাতে কোনো ঘাটতি না হয় সেজন্য আমাদের নজরদারি থাকবে।’

শাহীন/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়