ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

বিদায়ী বছরে নানা ঘটনায় সরগরম ছিলো রাজশাহী

শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:৫৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
বিদায়ী বছরে নানা ঘটনায় সরগরম ছিলো রাজশাহী

বিদায় নিচ্ছে আরও একটি ঘটনাবহুল বছর। মানুষের মনে থেকে যাচ্ছে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার স্মৃতি। বিদায়ী বছরে রাজশাহীতেও নানা ঘটনা ঘটেছে, যা দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিদায়ী বছরে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা, পানি না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা এবং ছাত্রলীগের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড। এ বছরে রাজশাহীতে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।

২০২২ সালে আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তোলপাড় তুলেছে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের আত্মহত্যা। গত ২১ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। এটি প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে প্রমাণিত হয়েছে তারা পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে দায়ের করা দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় বিএমডিএর বরখাস্ত হওয়া অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

এরপর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর কাণ্ড। গত ৭ জুলাই ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেধড়ক পেটান। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি ওই ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে।

আরো পড়ুন:

বিদায়ী বছরের শুরুটাই হয়েছিল শিক্ষক লাঞ্ছনার একটি আলোচিত ঘটনা দিয়ে। প্রধান শিক্ষক মারধর করেছিলেন নারী সহকারী শিক্ষককে। ২ জানুয়ারি গোদাগাড়ীর ক্ষুদ্র শাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই নারী শিক্ষককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। বছরের শুরুতেই আলোচনায় আসে শিক্ষককে এভাবে নির্যাতন করার ঘটনা।

গত ৪ আগস্ট রাজশাহী নগরীর হাড়ুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা ফেরদৌসি একই স্কুলের এক নারী সহকারী শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করান। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে শিক্ষা অফিস ঘটনার তদন্ত করে। এতে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

এ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে শহর। ১ ফেব্রুয়ারি রাবি ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় মারা যান গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাবিব হিমেল। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সে রাতেই ক্যাম্পাসে থাকা পাঁচটি ট্রাকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেন। পরে পরিস্থিতি সামাল দেয় রাবি প্রশাসন।

গত ১৯ অক্টোবর রাবির হলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার রহমান। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে রাবি শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি শাহরিয়ারকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ভাঙচুর করেন। প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কয়েকদফা কর্মবিরতি পালন করেন।

রাবি শিক্ষার্থীরাও পাল্টা বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যান। এরমধ্যেই রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের বিশেদগার করেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। হাসপাতাল ও রাবি কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করে। রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশার কুশপুতুল দাহ করে তাকে রাজশাহী ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও এ বছর আলোচিত ছিল রাজশাহীতে। গত ৫ সেপ্টেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় লাইভ চলাকালে বিএমডিএ কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘবদ্ধ হামলার শিকার হন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। এ নিয়ে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা।

২৬ মে বিকেলে রাজশাহী নগরীর ভুবন মোহন পার্কে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মারামারি করছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। ছবি তুলতে গেলে তারা অন্তত ছয়জন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন। 

গত ১৮ নভেম্বর রাজশাহীর বিতর্কিত ‘হোটেল এক্স’-এ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হন ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান। এ ঘটনায় সাংবাদিকরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন।

বিদায়ী বছরে রাজশাহীতে আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগ। বিশেষ করে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একের পর এক অপকর্ম আলোচনায় এসেছে। জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দিয়ে সিট দখল, সাইকেল চুরি, মাদকসহ ধরা পড়া, দোকানে বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়া এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত হিসেবে নাম এসে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের কারণে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিই বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

নারীকর্মীকে অশালীন প্রস্তাব দেওয়ার সময় ‘আমি সব চিটারের সর্দার’ বলা একটি অডিও ক্লিপ গত নভেম্বরে ভাইরাল হয়ে গেলে বহিষ্কার হন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা। আর ফেনসিডিল সেবনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর একই আদেশে পদ হারান সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি। গত ২০ অক্টোবর সভাপতিকে বহিষ্কার, সম্পাদককে অব্যাহতির পাশাপাশি কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ বছরের শেষে এসে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মাঠে নামেন। এ নিয়ে শুরু হয় নতুন আলোচনা। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে তিনি ওই আসনের দিকে মন দেন। হঠাৎ নেমে পড়েন প্রচারণায়। ইতোমধ্যে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলে জমাও দিয়েছেন। 

বছরের শেষে এখন রাজশাহীতে আলোচনায় সিনেমার নায়িকার হঠাৎ রাজনীতিতে আসার বিষয়টি।

মাসুদ

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়