ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: নিখোঁজ ২১ জেলের সন্ধান মিললো ভারতের কারাগারে
মনজুর রহমান, ভোলা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ এক জেলের স্বজনরা
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় মাছ ধরতে সমুদ্রে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ২১ জেলের সন্ধান মিলেছে। তারা সবাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বন্দি এসব জেলেদের ফিরে পেতে তাই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা।
এদিকে, জেলেদের ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক থাকলেও ঠিক কবে নাগাদ তারা পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের গত ২০ অক্টোবর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার ২১ জেলে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানলে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই ওই ২১ জেলে নিখোঁজ ছিলেন। পরে জানা যায়, নিখোঁজ জেলেরা ভারতীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর সময় নিখোঁজ জেলেরা হলেন- লালমোহন উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামের ইব্রাহিম, আবুল কালাম, বাবুল ও সালাউদ্দিন। চরফ্যাশন উপজেলার মোস্তাফিজ, রাকিব, ফারুক, হাসেম, কবির, রিয়াজ, কাঞ্চন, ছালাউদ্দিন, পারভেজ, মিরাজ, সালাউদ্দিন, শফিকুল, খোরশেদ, খলিল, বাবুল, জাকির ও কামাল।
রোববার (১৫ জানুয়ার) সকালে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় নিখোঁজ জেলে ইব্রাহিম, বাবুল, সালাউদ্দিন ও আবুল কালামের স্বজনদের সঙ্গে।
তারা জানান, ঘূর্নিঝড় সিত্রংয়ের সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন জেলেরা। ট্রলার ডুবির পর থেকে নিখোঁজ হন তারা। এরপর থেকে কেটে গেছে প্রায় ৪ মাস।কিছু দিন আগে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে জানতে পারি, জেলেরা সবাই বেঁচে আছেন, তবে তারা ভারতের কারাগারে বন্দি।
জেলে বাবুলের মা শাহিনুর বেগম ছেলের জন্য এখনও কান্না করছেন। এ পরিবারে নেমে এসছে অনিশ্চয়তা। অভাবের কারণে স্ত্রী জরিনা বেগম তার বাবার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন।
শাহিনুর বেগম বলেন, ‘মাছ ধরতে গিয়ে ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। ছেলেকে দ্রুত ফেরত চাই। এ সংসার দেখার কেউ নেই। অভাবে দিন কাটছে আমাদের। আমি আমার ছেলেকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
অপর জেলে ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রায় চার মাস ধরে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনাটনে দিন কাটছে। আমি আমার স্বামীর সন্ধান পেয়েছি, পুলিশ বলছে তারা ভারতের কারাগারে রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনও তারা ফিরে আসেনি। আমি আমার স্বামীকে দ্রুত কাছে ফিরে পেতে চাই।’
আবুল কালামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শুনছি তারা ভারতে আছে তাকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেক অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’
আবুল কালামের মেয়ে ফাতেমা বলেন, ‘আমার পরিবারে বাবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সেই এখন নেই। অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় লালমোহনের ৪ জেলেসহ আরো অনেকেই সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হন। এরমধ্যে আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি জেলেরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন।তাদের ব্যাপারে সব তথ্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। জেলেদেরকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদের পাশে আছে। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করছি।’
ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. তামীম আল ইয়ামিন বলেন, ‘যাদের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, তাদের খুব শিগগির ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
মাসুদ