ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

নানা সমস্যায় জর্জরিত খেতামারা আশ্রয়ণের বাসিন্দারা

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩  
নানা সমস্যায় জর্জরিত খেতামারা আশ্রয়ণের বাসিন্দারা

বিদ্যুৎ না থাকা, চলাচলের অসুবিধাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার খেতামারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। এই প্রকল্পের ১২০টি ঘরের মধ্যে ৫০টি ঘরে কেউ বসবাস করেন না। এছাড়া এখানে বসবাসকারীদের অনেকেই একাধিক ঘর নিজেদের দখলে নিয়েছেন। ফলে প্রকেল্পের বাসিন্দারা দুর্বিসহ জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ এই প্রকল্পের ১২০টি ঘরের মধ্যে ৫০টি ঘরের দরজাতে তালা লাগানো।

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, এই ঘরগুলো যারা বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের কেউ কেউ একদিনের জন্যও আসেননি। আর বাকিরা অল্প কিছুদিন থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকা, চলাচলের অসুবিধা এবং মামলা-হামলার ভয়ে ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। যারা আছেন তাদের কেউ কেউ একাই দখলে নিয়েছেন একাধিক ঘর। কেউ আবার নিজের বরাদ্দের ঘর ছেড়ে দখলে নিয়েছেন অন্যের ঘর।

আরো পড়ুন:

আশ্রয়ণের ৬ নম্বর ঘরের বাসিন্দা জাহিদুল হক বলেন, ‘এখানে রাস্তার অসুবিধা, তাছাড়া দুইটা নালাও (খাল) আছে। বর্ষাকালে এখান দিয়ে আসা-যাওয়া করা যায় না। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমকালে খুব কষ্ট করে থাকা লাগে। এ কারণেই ঘর বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এখানে থাকেন না।‘

২৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা রফিকুন্নেছা বলেন, ‘২০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা আব্দুল খালেক দুটি ঘর দখলে নিয়েছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সবাই। আমার পরিবারের সদস্যদেরকে এখন পর্যন্ত ৪টি মামলাতে জড়িয়েছেন তিনি।’ 

ফয়সল মিয়া নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘খালেক অকারণে মামলা দিয়ে আমাদের হেনস্তা করছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ নম্বর ঘরের বাসিন্দা আব্দুল খালেকের চুনারুঘাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ শতাংশ জমিও রয়েছে।

মামলার বিষয়ে আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি কাউকে হয়রানির জন্য মামলা করিনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমি মামলা দায়ের করেছি।’

 জমি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমার এবং আমার স্ত্রীর পেনশনের টাকা দিয়ে ৭ শতাংশ জমি কিনেছি। ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। জমিটি আমি ভোগ করতে পারছি না। দুই বছর ধরে আশ্রয়ণে থাকলেও এখন পর্যন্ত বন্দোবস্ত পাননি এখানকার বাসিন্দারা।’

এই আশ্রয়ণে রমিজ মিয়া, আহাদ মিয়া এবং মদরিছ মিয়া নামে আপন ৩ ভাইয়ের কোনো ঘর বরাদ্দ না থাকলেও তারা তিনটি ঘর দখলে নিয়ে বসবাস করছেন। আশ্রয়ণের অল্পদূরেই রয়েছে তাদের আধপাকা বাড়ি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমিজ মিয়া বলেন, ‘আমার বাবার সম্পত্তি থেকে আমরা তিন ভাই প্রত্যেকে ১ শতাংশ করে মোট ৩ শতাংশ জমি পেয়েছি। যা আমাদের ৩ জনের জন্য পর্যাপ্ত না। তাই আমার মায়ের নামে একটি ঘর বরাদ্দ নিয়ে আশ্রয়ণে থাকছি।’

উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তারেকুর রহমান তুষার বলেন, ‘এখানে অধিকাংশ গরিব মানুষই আসেন থাকার জন্য। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তির অত্যাচারে আশ্রয়ণ ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। এছাড়াও এখানে কালভার্ট ও বিদ্যুত না থাকাও অনেকর আশ্রয়ণ ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।’ 

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘আমি হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমের সঙ্গে কথা বলবো যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আশ্রয়ণে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও আমি কিছুদিন আগে সেখানে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে পাঠিয়েছিলাম দেখে আসার জন্য। ওইখানে একটি স্কুলও আছে এই রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে পাকাকরণ করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘরের বন্দোবস্তের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের খেতামারা গ্রামে প্রায় ৫ একর জমির উপর ২৪টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ৩৬০ পদাতিক ব্রিগেডের ১৩ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এসব ব্যারাক নির্মান করে। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসনের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি ব্যরাকে ৫টি করে ১২০টি ঘর, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য প্রত্যেকটি ব্যারাকের জন্য আলাদা আলাদা টয়লেট রয়েছে। এছাড়াও ব্যারাক প্রতি দুটি টিউবওয়েল নির্মাণ করা হয়।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়