ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

তিস্তা সেতুর রাজস্ব ফাঁকি, দায় নিচ্ছে না কেউ

ফারুক আলম, লালমনিরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩  
তিস্তা সেতুর রাজস্ব ফাঁকি, দায় নিচ্ছে না কেউ

ছবি: রাইজিংবিডি

লালমনিরহাটের কাকিনা-মহিপুর-রংপুর আঞ্চলিক সড়কের ব্যারিকেড খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন করে পাথরবোঝাই ভারী যান চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে সড়কটিতে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যার কারণে ভারী যানচলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে সড়কটি। আঞ্চলিক সড়কের ব্যারিকেড খুলে দেওয়ায় ‘তিস্তা সড়ক সেতু-১’ দিয়ে পারাপারে টোল আদায় শুরু হয়।

অপরদিকে ‘তিস্তা সড়ক সেতু-২’ (শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু) দিয়ে পারাপারে কোনো প্রকার টোল আদায় করা হয় না। এতে সরকারের রাজস্ব হাতছাড়া হওয়াসহ বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।

গত ১২ জানুয়ারি রংপুর এলজিইডি, লালমনিরহাট এলজিইডি, কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ব্যারিকেডটি তুলে দেয়। এর ফলে ঢাকা-লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে ‘তিস্তা সড়ক সেতু-১’ ওপর দিয়ে বুড়িমারী ও লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া পণ্যবাহী ট্রাক লরি চলাচল বন্ধের পথে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার।

আরো পড়ুন:

জানা যায়, প্রতিদিন এ রুটে স্থানীয় ও সারাদেশের পরিবহনের জন্য প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ যানবাহন চলে। ট্রাক ও বাস ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। মোটরসাইকেল ১০ টাকা, ছোট কার ৪০ টাকা এবং মাইক্রোবাস ৮০ টাকা। এর ফলে কুড়িগ্রাম জেলার অ্যামবুলেন্সসহ বেশকিছু ছোট গাড়ি কাকিনা-মহিপুর-রংপুর রুট ব্যবহার করছে।

তিস্তা সড়ক সেতুর আগের টোল আদায়কারী ও গাড়ি চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিস্তা সড়ক সেতু-১ ব্যবহার না করে সেতু-২ (শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু) ব্যবহার করলে বছরে ১৫-২০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাবে সরকার।

সূত্র বলছে, তিস্তা সড়ক সেতুর বর্তমান ঠিকাদার ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কিছু মহল ব্রিজের ঠিকাদারি লালমনিরহাট, রংপুরের ব্যবসায়ীদের হাতে রাখতে চাচ্ছে। এতেই ঘটছে যত সমস্যা।

ব্যারিকেড খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে ভারী ট্রাক চলাচল শুরু করে। ৮ দিন পর গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম রংপুর-পাটগ্রাম বাস চলাচল শুরু করে। প্রথম বাসটিকেই আটকিয়ে দেয় থ্রি হুইলার বা অটো চালকরা। এ সময় দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সড়ক অবরোধ হয়। ঢাকা বুড়িমারী এবং রংপুর-কাকিনা সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুই পক্ষের সঙ্গে বসে বাস চলাচল এক দিনের জন্য বন্ধ রাখে।

কালিগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল বলেন, হুট করে ব্যারিকেড তুলে দেওয়া হলো। আমরা আগাম কিছু জানি না। আমার এএসপি স্যার, ইউএনওসহ আমরা আইনশৃঙ্খলার জন্য ছিলাম। এতে ব্যারিকেডের ওখানে আমাদের অস্থায়ী চেকপোস্ট ছিল। এখন মাদক উদ্ধারসহ অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে গেল।

এলজিইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম থেকে ১০ টনের বেশি যান চলাচলে নিষেধ ছিল। আমরাও চাই সড়কটি টিকে থাকুক। এমনিতে সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা। নতুন কোনো নীতিমালা আছে কি না, আমার জানা নেই। রোড বেরিকেড তুলে দেওয়ার সময় রংপুর এবং লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীরা ছিলেন। এর পরে তো সব আপনারা জানেন।

হঠাৎ করে সড়কের ব্যারিকেড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, ভাবিয়ে তুলছে সাধারণ মানুষকে। স্থানীয় জনসাধারণ মনে করছেন, প্রতিদিন দিনরাতে কয়েকশ পাথরবোঝাই ট্রাক চলছে। যেগুলোর ওজন ৩০ থেকে ৫০ টন। এমন যান চলাচলে সরু সড়কটি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। সময় থাকতে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হোক। আশপাশের এলাকা এবং সেতুও ক্ষতির মুখে পড়বে।

লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নে ২০১২ সালে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়। এর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে ৫ কিলোমিটারে ৫টি ব্রিজ কালভার্ট রয়েছে। প্রতি বছর বন্যায় সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে যায়। গত বছরের বন্যার ক্ষত সড়কটির এখনও মেরামত করা হয়নি।

কালিগঞ্জের ইউএনও বলছেন, সড়কটি এলজিইডির। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীরা তুলে দিয়েছেন। তারাই কারণটি বলতে পারবেন। আইনশৃঙ্খলার জন্য আমি সেদিন ব্যারিকেডের আশপাশে ছিলাম।

লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে করা হয়েছে। ডিসি-এসপি সবাই জানেন। এরপর তিনি আর কিছুই বলেননি।

রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাজাহান আলী বলেন, আমাদের এমপি মোতাহার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি আধাসরকারি পত্র প্রেরণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার অফিসে জানানো হয়। আমাকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে গঙ্গাচড়ায় ৮৫০ মিটার ব্রিজের আবস্থান জানতে চায়। আমি তখন ব্রিজের অবস্থান জানাই। আমার অফিসে কথা বলে জানাই, ব্রিজটি গঙ্গাচড়ায় হলেও, সরকটি বাস্তবায়ন করেছে লালমনিরহাট।

তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছে, ডিসি এসপি প্রশাসন জানে। তুমি যাও। আমি গিয়ে দেখি কালিগঞ্জের ইউএনও আছেন। কয়েকদিন পর আওয়ারলি এবং দিনে ট্রাফিক কাউন্ট করব। সড়কের মূল লেয়ারে কী আছে তা পরীক্ষা করে পাঠাব। সড়কের কোনো পয়েন্টে কী আছে, কোনো লেয়ার আছে সেটাও পরীক্ষা করা হবে। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এলজিইডির পক্ষ থেকে মেইনটেন্যান্স করা হবে।

/ফারুক/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়