ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলে দু’ পক্ষে উত্তেজনা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
টাঙ্গাইলে ইজতেমা আয়োজনকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থী ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ ইজতেমার আয়োজন করছে, অন্য পক্ষ সেটি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে।
এ ছাড়াও ইজতেমা বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জবায়েরের অনুসারীরা।
এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
উভয় পক্ষের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাদ অনুসারীরা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের মাঠে বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার ইজতেমার আয়োজন করেছে। শনিবার জোহরের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই ইজতেমা বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জুবায়ের পন্থীরা।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জেলা কওমী ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শামছুল হক কাসেমী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কওমী ওলামা পরিষদের সহ-সভাপতি হযরত মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মুফতি আ. রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হাকিম, জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আ. আল মামুন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইলের ভাতকুড়া এলাকায় ইজতেমায় ইসলামের অপব্যাখ্যা করে মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হবে। মঙ্গলবার জুবায়ের অনুসারীদের এক দল জামাত ভাতকুড়া মসজিদে গেলে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। উল্টো মারধর ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার গোপালপুরের এক বালিকা মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আমিনুল হককে বিনা অপরাধে জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রথমে গোপালপুর থানায় ও পরে মধুপুর থানায় ৬/৭ ঘণ্টা আটক রাখা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এর প্রতিবাদ জানান তারা।
এছাড়াও ১৯৬৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা টাঙ্গাইল মারকাজ মসজিদে আমীর মাওলানা আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে মারকাজ মসজিদে পূণরায় সব আমল চালু রাখার দাবি জানান। ইজতেমা বন্ধের প্রতিবাদে টাঙ্গাইল মারকাজ মসজিদের সামনে জুবায়ের অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সাদ অনুসারী ইজতেমা আয়োজক কমিটির খাদেম মুফতি মোস্তফা খলিল চৌধুরী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের ঘোষণা একটাই, সেটা হচ্ছে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ছাড়া আর কোনো ইজতেমা নাই। তারপরও দ্বিতীয় জামাতে হাজার হাজার মুসল্লি অংশ নেয়। এর মধ্যে ১১ হাজার বিদেশি জামাত ছিলো। টাঙ্গাইলেও বর্তমানে ১১টি বিদেশি জামাত এসেছে। এর মধ্যে সৌদি, চীন, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আইবোরিকোস্ট ও আফ্রিকার জামাত রয়েছে। টঙ্গীর ইজতেমার পর ইতিমধ্যে গত সপ্তাহে আমাদের অনুসারীদের জামালপুরে ইজতেমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ময়মনসিংহেও হবে।
তিনি বলেন, আমাদের আয়োজন দেখে আমাদের বিরোধী পক্ষ পাল্টা কর্মসূচি করার পায়তারা করছে। গত রোববার দুপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের দুই পক্ষকে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে ডাকা হয়েছিলো। আমরা উপস্থিত হলেও তারা উপস্থিত হননি। তারা কোনো অনুষ্ঠান করলে আমরা তাদের কোন বাধা দেবো না। তারা পুরোটাই হেফাজত ইসলাম নিয়ন্ত্রিত। আমাদের কিছু ভাই বিভ্রান্ত হয়ে ওই দিকে চলে গেছে। তবে আমরা মূল ধারায় আছি।
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, সাদ পন্থীরা যে ইজতেমার আয়োজন করেছে পুলিশ প্রশাসন তাদের সহায়তা করবে। জুবায়ের পন্থীরাও ইজতেমা বা ধর্মীয় সমাবেশ করলে তাদেরও সহায়তা করা হবে। কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না।
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের থাকার কথা বলা হয়েছে। কেউ শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার চেষ্টা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাওছার/টিপু