ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

রাজসিক আয়োজনে ইমামকে বিদায়

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ২২ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ১২:৪০, ২২ মার্চ ২০২৩
রাজসিক আয়োজনে ইমামকে বিদায়

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে টানা ৫৩ বছর ইমামতি করেছেন হাফেজ মো. হাসান। বার্ধক্যজনিত কারণে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) শেষ জুমা পড়িয়ে বিদায় নিয়েছেন দীর্ঘ দিনের প্রিয় মসজিদটি থেকে। তার এই বিদায়কে রাঙিয়ে তুলতে রাজকীয় আয়োজন করে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী। 

শনিবার (১৮ মার্চ) বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কয়েক শ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর ইমাম হাফেজ মো. হাসানকে বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে আসে। পরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পেনশন হিসেবে ইমামের হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। এই টাকা মসজিদ কমিটি, এলাকাবাসী ও প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

বুধবার (২২ মার্চ) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাসিঙ্গা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমান শাহীন মোড়ল। 

এদিকে, বিদায়ের এমন আয়োজনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হাফেজ মো. হাসান।

হাফেজ মো. হাসান গোসিঙ্গা ইউনিয়নের খোঁজেখানি গ্রামের পিয়ার আলীর সন্তান। সংসার জীবনে পাঁচ সন্তান ও দুই মেয়ের জনক তিনি। পাঁচ ছেলের মধ্যে তিনজন মাদরাসার শিক্ষক ও দুইজন লেখাপড়া করছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যাওয়া হাফেজ মো. হাসান বলেন, ‘৫৩ বছরের হিসাব থাকলেও, এর চাইতে বহু বছর ওই মসজিদটিতে একাধারে ইমামতি করেছি আমি। আমাকে মসজিদ কমিটি, বাজারের ব্যবসায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ এলাকার মুসল্লিরা যে সম্মানে বিদায় দিয়েছেন তা অন্যান্য ইমামদের ইজ্জত বাড়িয়েছে। এমন নজির সব জায়গাতেই চালু হওয়া দরকার।’

সম্মাননা পাওয়া টাকায় এই ইমাম একটি মসজিদ ও মাদরাসা তৈরি করতে চান। তিনি বলেন, ‘ আমি জানি এ টাকা দিয়ে মসজিদ-মাদরাসার পুরো কাজ হবে না। আরও টাকার দরকার। আমি আমার সম্মাননা পাওয়া টাকায় কাজ শুরু করবো। যতোদিন বেঁচে আছি যতটুকু পারবো ততটুকুই করবো। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ও আমার পরবর্তী প্রজন্ম বাকি কাজ সম্পন্ন করবে।’

গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমান শাহিন মোড়ল বলেন, ‘হাফেজ মো. হাসান হুজুরকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মসজিদের ইমামতি করতে দেখেছি। সব ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আন্তরিক। তার এ আন্তরিকতায় তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তারই প্রতিফলন অবসরকালে তিনি পেলেন। তাঁর বিদায় উপলক্ষ্যে সবাই অশ্রুসিক্ত। বার্ধক্যজনিত কারণে গত শুক্রবার ছিল তাঁর কর্মজীবনের ইমামতির শেষ জুমা। তাই পরদিন গত শনিবার বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গোসিংগা বাজার থেকে কয়েকশ মোটরসাইকেল এবং গাড়ি বহর নিয়ে আমরা তাঁর বাড়িতে যাই। পরে সেখান থেকে আমরা তাকে সম্মান দিয়ে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে আসি।‘

তিনি আরও বলেন, ‘সম্মাননা হিসেবে বিদায়ী ইমাম সাহেবের হাতে নগদ ১০ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রবাসীরাও এ আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।’

রফিক/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়